সুদীপ রায়চৌধুরি: প্রত্যাশিত! বুধবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে জঙ্গিদের পাল্টা মার দেওয়ার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ সম্পর্কে এক কথায় এমনটাই মন্তব্য সামরিক বিশেষজ্ঞদের৷ তাঁদের কথায়, এসব ক্ষেত্রে চোখের বদলে চোখ এবং দাঁতের বদলে দাঁত নেওয়াটাই প্রচলিত কৌশল৷ ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছে ভারতীয় সেনারা৷
বস্তুত উরির সেনা ছাউনিতে হামলার পরই একই পদ্ধতিতে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে ‘ফিদায়েঁ’ হামলা চালানোর দাবি তুলেছিলেন একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন সেনাকর্তা৷ এমনকী দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরি নিজেও টেলিভিশনের পর্দায় এই ‘পথ’-এর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন৷
কী ভাবে এই অপারেশন? সেনাবাহিনীর সূত্রে যতদূর জানা যাচ্ছে, এই অপারেশন চালানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ভারতীয় স্থলসেনার ৯ নম্বর প্যারাকম্যান্ডো বাহিনীকে৷ এই ধরনের ঝটিতি অপারেশনের জন্য অনেকদিন ধরেই এই কোম্পানিকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল৷ বুধবার দুপুরে পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে জঙ্গিদের পাল্টা মার দেওয়ার গ্রিন সিগন্যাল মিলতেই অপারেশনের নীল নকশা তৈরি হয়ে যায়৷ ঠিক হয় গোটা অপারেশন শেষ করতে হবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে৷ যাতে সকালের আলো ফোটার আগেই দেশে ফিরে আসতে পারেন জওয়ানরা৷ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে আক্রমণের স্থান নির্বাচন৷ সেনাসূত্রে খবর, পাক সেনা বাহিনী ভেবেছিল ভারতীয় সেনারা পাল্টা হামলা চালাবে কুপওয়ারার মতো কাশ্মীর উপত্যকার কোনও সীমান্ত এলাকায়৷ সে কথা আঁচ করে বেছে নেওয়া হয় জম্মু এলাকাকে৷ অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা আধিকারিক এই অপারেশনকে ফুটবলের পেনাল্টি শুটের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “আপনি ভাবলেন বল মারা হবে ডান দিকে৷ কিন্তু বল এল বাঁ দিকে৷”
সূত্রের খবর, ভিমবের গাল্লি সেক্টর সংলগ্ন জঙ্গি ঘাঁটিগুলি সম্পর্কে নির্দিষ্ট ‘ইন্টেলিজেন্স ইনপুট’ এসে যাওয়ায় এই সেক্টরকেই স্ট্রাইকের জন্য বেছে নেওয়া হয়৷ এই অপারেশনে যুক্ত প্যারা কম্যান্ডোদের দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছিল৷ একটি অংশের দায়িত্ব ছিল, সীমান্তে মোতায়েন পাক সেনা ঘাঁটির জওয়ানদের গুলি যুদ্ধে ব্যস্ত রাখা৷ সামরিক পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘কভার আপ’৷ অন্য বা মূল অংশটি হানা দেয় জঙ্গি ঘাঁটিতে৷ এ ক্ষেত্রে পাক ব়্যাডারকে এড়াতে নিয়ন্ত্রণ রেখার এপারেই জওয়ানদের নামিয়ে দেওয়া হয়৷ সেখান থেকে হামাগুড়ি দিয়ে জওয়ানরা ঢুকে পড়ে পাক এলাকায়৷ গোয়েন্দা ইনপুটের ভিত্তিতে নাইট ভিশন গগলস ও স্যাটেলাইট ম্যাপিংয়ের সাহায্য নিয়ে অভিযান শুরু হয়৷ ন্যূনতম সময়ে ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে ভারতীয় জমিতে ফিরে আসে কম্যান্ডোরা৷
এক সেনা কর্তার কথায়, এই ধরনের অপারেশন চালানোর সময় দুটি বিষয় মাথায় রাখা হয়৷ ১, কোথায় এবং ঠিক কখন আঘাত করলে শত্রুর সবথেকে বেশি রক্তক্ষরণ হবে৷ ২, ন্যূনতম কতক্ষণ সময়ের মধ্যে অপারেশন শেষ করা যাবে৷ সেই ভাবেই পরিকল্পনা তৈরি হয়৷ বুধবার মধ্যরাতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে সেই শর্তগুলো ১০০ শতাংশ রক্ষিত হওয়াই সামরিক দিক থেকে সবচেয়ে বড় সাফল্য৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.