সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জীবন-মরণের সীমানা ছাড়িয়ে ভারতের উত্তর দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে হিমালয়। রাজার মতো ঐশ্বর্যে, সন্ন্যাসীর মতো ঔদাসীন্যে সে ঘিরে রেখেছে ভারতকে। লালন করছে, রক্ষা করছে।
অথচ, এই হিমালয়ের কোলেই লুকিয়ে রয়েছে এমন এক হ্রদ, যা অতৃপ্ত আত্মার আবাস! কাছে গেলেই দেখা যায়, সেই হ্রদের জলে ভেসে রয়েছে অগণিত কঙ্কাল! জলের থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে রয়েছে নরকরোটি। হ্রদের পাড়েও ইতস্তত ছড়িয়ে পড়ে থাকে নরকঙ্কাল ও অস্থি! হিমালয়ের শান্ত নিসর্গে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য নজরে পড়লে ভয় পাওয়ারই কথা!
প্রথম দর্শনেই এমন ভয় পাইয়ে দেওয়া হ্রদের নামটি কিন্তু রূপমাধুরীতে মোড়া। উত্তরাখণ্ডের চামোলির অন্তর্গত এই হ্রদের নাম রূপকুণ্ড। নন্দা দেবী পরিক্রমায় যেতে হয় এই হ্রদ পেরিয়েই।
কিন্তু ওই রাশি রাশি নরকঙ্কাল? তারা কী ভাবে জায়গা করে নিল রূপকুণ্ডের জলে?
অনেক দিন পর্যন্ত শোনা যেত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যে সব জাপানি সেনারা ভারতে চলে এসেছিল, এগুলো তাদেরই কঙ্কাল! ঠান্ডায়, তুষারঝড়ে তাদের সলিলসমাধি হয় রূপকুণ্ডে।
কিন্তু বছর তিনেক আগে গবেষকরা ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ওই কঙ্কালের রহস্যভেদে সক্ষম হয়েছেন। জানা গিয়েছে, এই কঙ্কাল সেই খ্রিস্টপূর্ব নবম শতক থেকে ডুবে রয়েছে রূপকুণ্ডের জলে।
কাহিনি বলে, কনৌজের রাজা যশধওয়াল অন্তঃসত্ত্বা রানি বালমপা, দাস-দাসী এবং সেনাদের সঙ্গে নিয়ে চলেছিলেন নন্দা দেবী পরিক্রমায়। নন্দা দেবীর পূজায় তিনি সৌভাগ্যময় করতে চেয়েছিলেন সন্তানের জীবন। কিন্তু, পথে এক ভয়াবহ তুষারঝড় ওঠে! সেই ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে সব লোকজন-সহ মৃত্যু হয় রাজা-রানির! তাঁদের মৃতদেহ স্থান পায় রূপকুণ্ডে।
তার পর থেকেই হিমালয়ের শান্তিকে তছনছ করেছে এক অভিশাপ। লোকবিশ্বাস বলে, অপঘাতে মৃত্যু হওয়ায় কারও আত্মাই মুক্তি পায়নি! তাই তারা এই পথের যাত্রীদের মৃত্যুর হাতছানি দেয়। খুব কম সংখ্যক মানুষই তাদের এড়িয়ে সার্থক করতে পারেন নন্দা দেবী পরিক্রমা। খুব সাবধানে, পুজো দিয়ে তাই এড়াতে চান অতৃপ্ত আত্মার অভিশাপ!
কিন্তু, তাতেও অভিশাপ কাটে না! হিমালয়ের শীতল বাতাস আজও দীর্ঘশ্বাসের মতো ঘুরে বেড়ায় রূপকুণ্ডের চার ধারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.