সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বাধীনতার আগে জওহরলাল নেহরু একবার বলেছিলেন, কালোবাজারিদের ল্যাম্পপোস্টে ঝোলানো উচিত৷ কিন্তু স্বাধীনতার পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী তেমনটি করতে পারেননি আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা ও তার উপর জনগণের আস্থা স্থাপনের জন্যই৷ কিন্তু মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়টিতে একটি কঠোর আইনের জন্য সত্তর বছর অপেক্ষা করতে হল৷ এবার ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রিতে শাস্তি আরও কঠোর হচ্ছে৷ হতে পারে যাবজ্জীবন কারাবাস এবং কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা৷
বর্তমানে এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে ছ’মাস পর্যন্ত কারাবাস ও এক হাজার টাকা আর্থিক জরিমানার সংস্থান রয়েছে আইনে৷ তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধনের জন্য সুপারিশ করল ল’ কমিশন৷ সেখানেই এমন কঠোর শাস্তি ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধির মধ্যে সামঞ্জস্য করার চেষ্টা হয়েছে নতুন সংশোধনীতে৷
কমিশনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আইন সংশোধন হলে খাদ্যে ভেজালের অভিযোগে গ্রেফতারের ঘটনা বাড়বে৷ বর্তমানে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭২ ও ২৭৩ ধারায় ‘ভেজাল খাদ্য ও পানীয় বিক্রির চেষ্টা’ এবং ‘অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয় বিক্রি’, উভয় ক্ষেত্রেই সর্বাধিক ছ’মাস পর্যন্ত জেল এবং এক হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ অথচ, ১৯৫৪ সালের খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ আইনে এর থেকে কম অপরাধের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে৷ সেই প্রভেদ-পার্থক্য দূর করতেই আইন সংশোধনের প্রয়োজন বলে মনে করছে ল’কমিশন৷
আটের দশকে কলকাতায় ভেজাল তেল কাণ্ড থেকে শুরু করে হালফিলের নুডলস-আতংক৷ সাধারণ মানুষকে নাড়া দিয়েছে বারবার৷ কিন্তু আইন কঠোর না হওয়ার কারণে কালোবাজারিদের বাগে আনা যায়নি৷ বিপদ রয়েই গিয়েছে সাধারণের৷ অতি সম্প্রতি খাদ্যে ভেজাল ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের বেশ কিছু অভিযোগ সামনে আসে৷ সেই সঙ্গে খাদ্য ও পানীয়র গুণমান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়৷ বিষয়টি যেহেতু সব শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্য জীবনের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট, তাই সরকার থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ আদালত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে৷ আর তখন থেকেই আইন কঠোর করার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠতে শুরু করে৷
কয়েক দশক আগেই পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ এবং ওড়িশা এই সংক্রান্ত আইনে সংশোধন করেছে৷ এই সব রাজ্যে শাস্তি ও জরিমানা বৃদ্ধি হয়েছে৷ যদিও রাজ্যের আইনে অভিযুক্তের শাস্তি বিধানের অধিকার অনেকটাই ছাড়া হয়েছে আদালতের উপর৷ বিশেষ ক্ষেত্রে আদালত অভিযুক্তের যাবজ্জীবনের কম কারাদণ্ড দিতে পারে৷ রাজ্যেরও এই ক্ষেত্রে আইন পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে৷ কারণ, সংবিধান অনুসারে খাদ রয়েছে যৌথ তালিকায়৷ অর্থাৎ, উভয়ই খাদ্য-বিষয়ক আইন কার্যকর করতে পারে৷
গতমাসেই ল’কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আইন সংশোধনের ব্যাপারে সুপারিশের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়৷ জানা গিয়েছে, একটি সময়োপযোগী আইনের জন্য ল’কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ এরপরই আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করার কাজে হাত দেয় কমিশন৷ সেই বৈঠকে কেন্দ্রীয় আইন সচিব সুরেশ চন্দ্রও উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি সেখানে এই বিষয়ে সরকারের মতামত তুলে ধরেন৷ এরপর সরকার সংসদে সংশোধনী পাস করানোর পর তা সারা দেশে কার্যকর হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.