সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের উপরেই জোর দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি। কারণ কয়েকদিন আগেই সরকার মেনে নিয়েছে দেশে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রথম দফায় বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা যে পূরণ করা সম্ভব হয়নি, সেকথা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউ। ফলে দ্বিতীয় দফার শুরুতেই মোদির অগ্রাধিকারে বেকারত্ব। প্রথম দফার পাঁচ বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হারও সুবিধাজনক ছিল না। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকেও আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে না পারলে যে বেকারত্ব সামলানো যাবে না, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে কোনও বিতর্ক নেই। সমস্যার গুরুত্ব বুঝেই মোদি বুধবার গঠন করে দিয়েছেন দুটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মন্ত্রীদের কমিটি। যারা বিশেষভাবে জোর দেবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর। দুই কমিটির শীর্ষে মোদি নিজেই থাকছেন। দুই কমিটিতে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।
তবে এরই মাঝে আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক। চলতি অর্থবর্ষের জন্য ভারতের বৃদ্ধির হার সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে গিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মনে করছে তা ৭.৫ শতাংশই থাকবে। মন্ত্রিসভার একটি নজর রাখবে বিনিয়োগ এবং আর্থিক বৃদ্ধির উপর। এবং দ্বিতীয়টি নজর রাখবে কর্মসংস্থান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উপর। প্রথমটিতে থাকছেন ১০ সদস্য এবং দ্বিতীয়টিতে ৫। কর্মসংস্থান ও কর্মদক্ষতা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য তালিকায় রয়েছেন অমিত শাহ ও নির্মলা সীতারমন ছাড়াও রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, রমেশ পোখরিয়াল, ধর্মেন্দ্র প্রধান, মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডে, সন্তোষকুমার গাঙ্গোয়ার ও হরদীপ সিং পুরী। অন্যদিকে, আর্থিক উন্নয়ন সংক্রান্ত কমিটিতে রয়েছেন অমিত শাহ, নির্মলা সীতারমন, নীতিন গড়করি ও পীযূষ গোয়েল-সহ পাঁচ সদস্য। গত শুক্রবার, শপথ নেওয়ার ঠিক পরের দিনই ২০১৮-২০১৯ এর শেষ ত্রৈমাসিকের রিপোর্ট সামনে আসে। আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও এক দফা নেমে এসে দাঁড়ায় ৫.৮ শতাংশে। বিগত ১৭টি ত্রৈমাসিকে এত নিচে কখনও নামেনি আর্থিক বৃদ্ধির হার। একই সঙ্গে সরকারের তরফে মেনে নেওয়া হয়, ৪৫ বছরের মধ্যে দেশের বেকারের সংখ্যাও এত নিচে আসেনি। আগেই এ বিষয়ে একটি রিপোর্টের কথা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হলেও গত শুক্রবারই সরকারিভাবে তা স্বীকার করে নেওয়া হয়।
পরিসংখ্যান মন্ত্রকই এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে নেয় যে ১৯৭২-১৯৭৩ সালের পর থেকে সারা দেশে কর্মহীনের সংখ্যা এত বেশি আর কখনও হয়নি। ফলে এই দুটি ক্ষেত্রে যে খামতি রয়ে গিয়েছে তা নিয়ে সন্দেহের জায়গা নেই। দেখা গিয়েছে, শহরে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৭.৮% এবং গ্রামে তা দাঁড়িয়েছে ৫.৩%। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে পুরুষদের বেকারত্বের হার ৬.২% এবং মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫.৮%। শহর এলাকায় পুরুষদের বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ১০.৮% এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩.৮%। এই রিপোর্ট পাওয়ার পরে টনক নড়েছে কেন্দ্রের। বিশ্বব্যাংক অবশ্য ভারত নিয়ে আশাবাদী। ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ বিষয়ক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের তরফে জানানো হয়েছে ২০১৯ সালে চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার থাকবে নিম্নমুখী। উলটোদিকে ভারতের বৃদ্ধির হার থাকবে ঊর্ধ্বমুখী। এর জেরেই ২০২১ সালে ভারত ফের বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় উপরে উঠে আসবে বলে মনে করছে তারা। ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ থাকবে৷ এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক নিশ্চিত। উল্লেখ্য, নতুন দায়িত্ব নেওয়া মোদি-২ সরকারের পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা হবে ৫ জুলাই। বাজেটের আগে নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের কাছে নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে জায়গা পাবে ব্যাংকগুলির অনুৎপাদক সম্পদবৃদ্ধিতে রাশ টানা, নতুন কর্মসংস্থান, কৃষিক্ষেত্রে সংকটের মোকাবিলা এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে লগ্নিবৃদ্ধি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.