সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানিদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। এই সিদ্ধান্তের জেরে বিপাকে পড়েছেন শয়ে শয়ে পাকিস্তানি নাগরিক। যাঁদের কেউ সদ্য বিয়ে করে এদেশে এসেছেন, কেউ আবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। স্বল্প সময়ের নোটিশে দেশ ছাড়তে হচ্ছে তাঁদের। গত কয়েকদিনে এমন অজস্র ছবি। চোখের জলে মোদি সরকারের কাছে সেই সব মানুষের আর্জি, ‘যারা অপরাধ করল সেই জঙ্গিদের শাস্তি দিন, আমাদের নয়।’
রিপোর্ট বলছে, ভারত সরকারের তরফে পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা বাতিলের নির্দেশিকার পর এখনও পর্যন্ত ৬৮২ জন নাগরিক ওয়াঘা আটারি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছেন। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে পরিবারচ্যুত নাগরিকদের কান্না। ভারত ছাড়ার প্রাক্কালে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে করাচির বাসিন্দা ইরাম নামে এক মহিলা বলেন, ১০ বছর হল তাঁর বিয়ে হয়েছে। ভারতীয় স্বামীর সঙ্গে দিল্লিতে থাকতেন তিনি। তাদের ৮ বছরের এক সন্তান রয়েছে। হঠাৎ একদিন পুলিশ বাড়িয়ে এসে জানায় তাঁকে চলে যেতে হবে। এখন সব ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। ক্ষুব্ধ ইরাম বলেন, “আমাদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা মানবাধিকার বিরোধী। জোর করে আমায় ভারতছাড়া করা হচ্ছে। আমি ভাবতে পারছি না স্বামী সন্তানকে ছেড়ে আমায় এখন পাকিস্তানে থাকতে হবে।” তিনি আরও বলেন, ”বিবাহ সূত্রে ভারতে থাকার জন্য আমার দীর্ঘ মেয়াদী ভিসা ছিল। কিন্তু করোনাকালে তা বাতিল হয়। এরপর ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করলেও তা হয়নি। সরকারের এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে তাঁর জন্য আমরাও দুঃখিত। কিন্তু দোষীদের শাস্তি দিন, আমাদের নয়।”
ভারত ছাড়তে বাধ্য হওয়া আর এক মহিলা করাচির সামরিন বলেন, “গত বছরের অক্টোবর মাসে ভারতীয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আমার। বর্তমানে আমি গর্ভবতী। এই অবস্থায় পরিবার ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যেতে হচ্ছে আমাকে। কোনও একজনের দোষে সকলকে শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়। যদি সরকার মনে করে এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তানিরা। তাহলে তাঁদের কাশ্মীর যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। কিন্তু এভাবে ভারতছাড়া করা কোনওভাবেই উচিত নয়।”
এর আগে ভারতীয় নাগরিক মাকে দিল্লিতে রেখে অশ্রুসজল চোখে দুই শিশুর পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার মর্মান্তিক ছবি দেখেছে গোটা দেশ। দিল্লিতে মামাবাড়ি রয়েছে ১১ বছরের জৈনব এবং ৮ বছরের জানিশের। মাস খানেক আগে অসুস্থ দিদাকে দেখতে মায়ের সঙ্গে সেখানে এসেছিল পাকিস্তানের নাগরিক দাদা (জৈনব) ও বোন (জানিশ)। জৈনব ও জানিশের মা ভারতীয় নাগরিক। পাকিস্তানে বিয়ে হলেও সেখানকার নাগরিকত্ব পাননি ওই দুই শিশুর মা। তাই ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার। যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝে স্বজন হারানোর এমনই একের পর এক ঘটনা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে, ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তকে মানবিকভাবে পর্যবেক্ষণের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.