সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গল্পটা হতে পারত ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’-এর প্রধান চরিত্র সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো। কাবুলিওয়ালাকে ভালবেসে বিয়ে করে পাড়ি দিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। সেখানে তালিবানের খপ্পরে পড়ে নরকযন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন। তারপর পালিয়ে আসেন ভারতে। কিন্তু ওই ঘটনা বা উপন্যাসের রিয়েল লাইফ স্টোরি হল না দিল্লির ইন্দ্রার ক্ষেত্রে। পুরো নাম, ইন্দ্রা গান্ধী (ইন্দিরা গান্ধী নন কিন্তু)।
মধ্য তিরিশের ইন্দ্রাকে বিদেশে থাকার ও টাকার লোভ দেখিয়ে বিয়ে করেছিল ইসলামিক স্টেট জঙ্গি নেতা খোয়াজা মহিদিন। ছকটা ছিল লাভ জেহাদের। বয়সে অনেক বড় মহিদিনকে বিয়ে করাটা যে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে তা কয়েক মাস পর বুঝতে পারে দিল্লির উচ্চশিক্ষিত মেয়ে ইন্দ্রা। সে সরে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। ইসলাম ধর্ম কবুল করার জন্য ইন্দ্রার উপর চাপ দিতে থাকে মহিদিন। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে আর্থিক কষ্টও। দিনদিন স্বপ্নভঙ্গের বেদনা বাড়ছিল ইন্দ্রার। একদিন সে মহিদিনের কাছ থেকে পালিয়ে আসে অনেক দূরে কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে এবং বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ দেয়। অভিযোগ দায়ের করে পুলিশেও।
অন্যদিকে, জেহাদ ও ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শের প্রতি আনুগত্য বাড়ছিল তামিল যুবক মহিদিনেরও। সে ডিভোর্স দিয়ে দেয় ইন্দ্রাকে। এরপর তামিলনাড়ুর কুদ্দালোরের প্রত্যন্ত জঙ্গল এলাকায় ইসলামিক স্টেটের প্রতি অনুগত শতাধিক মালয়ালি ও তামিল মুসলিম যুবককে নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির খোলে মহিদিন। সিরিয়া ও আফগানিস্তানে আইএস জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারে যোগাযোগ রাখত সে। ছবি ও খবর বিনিময় করত নিয়মিত। ২০১৪ সালে দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় বড়সড় হামলা ও গণহত্যার ছক কষছিল সে। গোয়েন্দা মারফত খবর পেয়ে তাকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। পুলিশ তদন্তে নেমে উদ্ধার করে প্রচুর নথি, অস্ত্র, সিডি, পেনড্রাইভ ও হার্ড ডিস্ক। জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালেই আল কায়দার প্রতি অনুগত হয়ে পড়ে মহিদিন।
এনজিও মারফত সৌদি আরব থেকে আসা টাকার জোরে সে তামিলনাড়ুর নেলিকুপামে অনেক দলিত হিন্দুকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছিল ২০০৪ সাল থেকে। দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখার দাবি, তামিলনাড়ু পুলিশের তদন্ত রিপোর্টই বলছে, কোথায় কাদের নিয়ে কবে ধর্মান্তরকরণ করার শিবির খুলত মহিদিন। ইন্দ্রা গান্ধীকে বিয়ে করেছিল লাভ জেহাদের কারণেই। নেলিকুপাম ও কুদ্দালোরে সে ভিডিও কলের মাধ্যমে ট্রেনিং দিত। ২০১৪-য় হিন্দু মহাসভার এক নেতাকে সে খুন করেছিল। তামিলনাড়ুর সালেমে জেলে থাকার সময়ই সে জেলারকে চড় মেরেছিল। ইন্ডিয়া টুডে ও আজ তক জানিয়েছে, মাধ্যমিক পাস করার পরই খোয়াজা সিপিএমে যোগ দেয়। পরে পার্টি ছেড়ে সে পিএফআই-এ যোগ দেয় এবং কট্টর ইসলামি ভাবধারায় জড়িয়ে পড়ে। পিএফআই হল কেরল ভিত্তিক একটি উগ্র মৌলবাদী ইসলামি সংগঠন। ২০১৪ সালে সে প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার উপর কড়া নজর ছিল আইবি ও এনআইএ-র। সম্প্রতি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সে জখম হয় এবং ধরা পড়ে দিল্লির ওয়াজিরাবাদ থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.