সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাতভর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের লাঠিচার্জ, সংঘর্ষ। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের নিয়ন্ত্রণে, অশান্তি দমনে পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। অন্যদিকে, যারা রবিবার রাতে ক্যাম্পাসে গন্ডগোল বাঁধাতে ইন্ধন যুগিয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করে পুলিশের তরফেও ধরপাকড় শুরু হয়েছে। সেখানেই মিলছে চমকপ্রদ তথ্য। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার রাতের অশান্তিতে ধৃত ১০ জনের একজন পড়ুয়া নন, সকলেই স্থানীয়, অর্থাৎ ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগত’।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, এই দশজনের প্রত্যেকেরই আগে অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকার কুখ্যাতি আছে। এরা সকলে জামিয়া এবং ওখলা এলাকার বাসিন্দা। এই দুটি জায়গাই জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা লাগোয়া। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উসকানি দেওয়া তাদের পক্ষে সহজ বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ।
তবে অশান্তিতে যে পড়ুয়াদের কোনও ভূমিকাই নেই, সেই ক্লিনচিটও দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখার একটি প্রতিনিধিদল জামিয়া মিলিয়ায় অশান্তির ঘটনায় তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমা আখতার একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরি করেছেন। যে কমিটি মূলত পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখবে। তবে তিনি পড়ুয়াদের বিক্ষোভে ‘বহিরাগত’দের উপস্থিতির নিয়ে সন্দিহান। তাঁর ধারণা, পড়ুয়াদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উসকানি দিয়ে তার অভিমুখ অন্য দিকে ঘোরাতে কেউ কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল।
এদিকে, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে আগেই এককাট্টা হয়েছিল দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের একাংশ। এবার আইনি লড়াইয়েও একজোটে শামিল অনেকে। সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে দায়ের হয়েছে মামলা। কিন্তু তা শুনতেই রাজি হননি বিচারপতিরা। মামলাটি শীর্ষ আদালতের বিচার্য বিষয় নয়, একথা জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কেন পুলিশ, এই প্রশ্ন তুলে আজ বিকেলে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হতে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তনী সংসদের সদস্যরা। তবে শীর্ষ আদালতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সম্পূর্ণ উলটো কথা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরই পুলিশ ডেকেছিলেন ক্যাম্পাসে। অপরদিকে, সেদিনের ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই ব্যক্তি ভরতি হন সফদরজং হাসপাতালে। তারা কি জামিয়া ক্যাম্পাসের বিক্ষোভে যোগ দিয়ে আহত হয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে দিল্লি পুলিশ গুলিচালনার ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। ফলে এরা কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তা নিয়ে তীব্র সংশয় দেখা দিয়েছে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (CAA) প্রতিবাদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকা এতটা সমালোচিত হতেই সুর খানিক নরম করেছেন দক্ষিণ পূর্ব দিল্লির ডিসিপি চিন্ময়া বিসওয়াল। নতুন করে বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, ”পড়ুয়াদের সঙ্গে কোনও সমস্যা হয়নি। ওখানে উসকানিমূলক কার্যকলাপ চলছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটার আশঙ্কা ছিল। তাই তা স্বাভাবিক রাখতে আমরা পদক্ষেপ করেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.