কিংশুক প্রামাণিক: কথায় বলে টকের জ্বালায় পালিয়ে তেঁতুল তলায় বাস। কলকাতা থেকে ‘পালিয়েছিলাম’ খানিক গরমের হাত থেকে বাঁচতে। কিন্তু একী কাণ্ড! সাত হাজার ফিট ওপর দাঁড়িয়ে দর দর করে ঘামছি। রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। গাড়ির জানলা খুলে হিমালয়ের কোমল বাতাস খাওয়ার জো নেই। লু বইছে। চোখ মুখ জ্বালা করছে।
এ কোন নৈনিতাল (Nainital), আলমোড়া। এ কেমন কৌশানী, রানীক্ষেত। গরম কাকে বলে তা এই এলাকার মানুষ জানত না। আজ তপ্ত কড়াই এর মতো সব যেন ফুটছে। নদী নালা ঝর্ণা সব শুঁকিয়ে গিয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মানুষ। মেঘ ডাকে কিন্তু বৃষ্টি হয় না। এ বছর এমনই নাকি চলছে। শীতে বরফ পরেনি। এখনও বৃষ্টি শুরু হয়নি। গাছে পুষ্ট হছে না ন্যাসপাতি। বেদানায় লাল রং ধরছে না। এক পায়ে অসহায় দাঁড়িয়ে পাইন গাছগুলো। ওদের পালানোর উপায় নেই। সহ্য করতে হচ্ছে ‘হিট ওয়েব’। পাইনের শুকনো পাতায় পাতায় ঘষা লেগে দাবানলে পুড়ছে পাহাড়। আলমোড়ায় (Almora) দেখলাম দমকল নেমেছে জঙ্গলের আগুন নেভাতে। বিশাল সেই আগুনে হলং বাংলোর চেয়েও অনেক অনেক বেশি সর্বগ্রাসী, বিধ্বংসী। দমকলের জল তুলনায় সামান্যই। কোন দিক সে সামলাবে। এ পাহাড় ও পাহাড় সব জ্বলছে। আমাদের অবস্থা অসহায়। এর চেয়ে কলকাতা থাকা ভালো ছিল।
ঘুরতে গেলে বাঙালির বাক্সপ্যটরা একটু বেশিই হয়। আর পাহাড় হলে ত কথাই নেই। হালকা শীত, কম শীত, কনকনে শীত সব রকম পোশাক নিতে নিতে বাক্স উপচে যায়। ততটা না হলেও কিছু শীতের পোশাক সঙ্গে নিয়েই কুমায়ুন সফরে এসেছিলাম কটা দিন রাজনীতি ফাজনীতির খবর লেখা থেকে বহুদূরে হিমালয়ের কোলে কাটাব বলে। সঙ্গে পরিবার। এটা বাৎসরিক গরমের ছুটির ট্যুর। নিশ্চিত ছিলাম নৈনিতালে পা দিয়েই একটু গরম পোশাক পরে শীত উপভোগ করা যাবে। ফোন টোন করে ভাব নিয়ে সকলকে বলব, ‘ওদিকে বৃষ্টি হল নাকি?’ টাইমিংটা এমন ছিল ফিরে দেখব ‘বর্ষা এসে গেছে’।
কিন্তু কোথায় কি। মানুষ ভাবে এক হয় আর এক। এতো মনে হচ্ছে নাকতলায় আছি। নৈনিতালে দার্জিলিং এর মতো সারা বছর শীতের পরশ থাকে। গরমের সময় এয়ারকণ্ডিশন ওয়েদার। ফলে এখানে কোথাও ‘এসি’ নেই। ‘গ্রেট ইস্টান’ শো রুমেরও দরকার নেই। যে অতিথিসালায় উঠলাম সেখানে ঘরে ফ্যানও নেই। কি মুশকিল। দুপুরে ৩২ ডিগ্রি। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন ৪০। খবর পেলাম দিল্লি আবার ৫০ ছুঁয়েছে। তার প্রভাবে পুড়ছে পাহাড়। এখনও সব স্কুল খোলেনি। গরমের ছুটির বেড়ান চলছে। তবে কুমায়ুনে বাঙালি খুব কম দেখলাম। এবার নাকি কাশ্মীর আর লাদাখের দিকে ভিড় বেশি। নিশ্চিত ঠাণ্ডা। কেউ আর ঝুঁকি নিচ্ছে না। নৈনিতালে তাও রাতে একটু মনোরম আবহাওয়া পেলাম। কৌশানী রানীক্ষেতে তাও নেই।
এই পাহাড়ে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর বহু লেখায় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কথা। কাব্যের পরতে পরতে শীতের আমেজে। মহাত্মা গান্ধী কৌশানীকে ভারতের সুইজারল্যান্ড বলেছিলেন। এদিকে এসে শান্তি খুঁজে নিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আজ সেখানে একটাও নদী অথবা ঝোড়ায় জল নেই। বরফ না পরায় জলের আকাল। এখনও বৃষ্টি নামেনি। ফলে জলের জন্য হাহাকার। তাহলে একেই বলে ‘গ্লোবাল ওয়ানিং’। শুধু দিল্লি কলকাতা পুড়ছে না, এবার উষ্ণায়নের গ্রাসে হিমালয় পর্বত। প্রকৃতির উপর নির্বিচার অত্যাচারের প্রতিশোধ শুরু। সামনে ভয়ংকর দিন। ঘেমে নেয়ে কটা দিন কাটিয়ে দিলাম। বুঝলাম গরমের ছুটি এখন থেকে গরমেই কাটাতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.