ফাইল ছবি
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে বাতিল ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য। ওই মামলার শুনানি শেষে আপাতত চাকরি বাতিলের রায়ে স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। পরবর্তী শুনানি আগামী ১৬ জুলাই।
চাকরিহারাদের বেতন ফেরানোর নির্দেশে স্থগিতাদেশ
চাকরিহারাদের ১২ শতাংশ হারে বেতন ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ
রাজ্য জানিয়েছে সুপারনিউমেরিক পদে কোনও নিয়োগ হয়নি। তাই মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। পরবর্তী শুনানি আগামী ১৬ জুলাই।
পুরো প্যানেল বাতিল করা বৈধ নয়
যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা গেলে পুরো প্যানেল বাতিল করা বৈধ নয়। তার ফলে সার্বিক অভিঘাত আসবে, তা মাথায় রাখতে হবে। সংক্ষিপ্ত রায়দানে বলল সুপ্রিম কোর্ট।
১০ মিনিট পর ফিরে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনামা পড়া শুরু করলেন প্রধান বিচারপতি।
চাকরি বাতিলে স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট
চাকরি বাতিলে স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ১৬ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি।
বিকাশের প্রতিক্রিয়া শুনে সুপ্রিম কোর্ট জানায়
নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ হলে সম্পূর্ণ প্যানেলই তো বাতিল হবে। পুরো বিষয়টি বিবেচনা করব। তার আগে কোনও শর্ত ছাড়া স্থগিতাদেশ নয়। যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই মূল লক্ষ্য।
মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সওয়াল
টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি হয়েছে। বিরাট দুর্নীতি হয়েছে। নাইসা সংস্থাই উঠে গিয়েছে। ২৩ হাজার ১২৩ জনের চাকরির সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। প্যানেল বাতিল করে দেওয়া হোক।
চাকরিহারাদের আইনজীবী
বৈধ এবং অবৈধদের একই তুলি দিয়ে রং করা হয়েছে। বেআইনি নিয়োগ হয়নি এমন অনেকের চাকরি গিয়েছে।
চাকরিহারাদের আইনজীবীকে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির
প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “বেআইনি একটি নিয়োগও হয়নি? কেউ অবৈধভাবে চাকরি পাননি?”
বিরক্ত প্রধান বিচারপতি
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যদিও সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “এটা রাজনীতি করার জায়গা নয়। বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে বিরাট লাভ হবে না। দুর্নীতিতে ফোকাস করাই উচিত।”
চাকরিহারাদের সওয়াল
চাকরিহারার আইনজীবী জানান, সিবিআইয়ের উদ্ধার করা OMR শিটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অথচ ওই প্রমাণের উপর ভিত্তি করে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি চলে গেল। যা যুক্তিযুক্ত নয়। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “ওএমআর শিটের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে?” চাকরিহারাদের আইনজীবী জানান, সবটাই তদন্তসাপেক্ষ। তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে চাকরি বাতিল করা উচিত নয়।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সওয়াল
রাজ্য সরকার, এসএসসির পর আদালতে সওয়াল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের। আইনজীবী বলেন, ‘‘হাই কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার মানুষ চাকরিহারা। যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই হোক। মাথা ব্যথা হচ্ছে বলে পুরো মাথা কেটে দেওয়া কাজের কথা নয়। সকলের চাকরি গেলে শিক্ষক পাব কোথায়?’’
এসএসসির সওয়াল
সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে এসএসসির আইনজীবী দাবি করেন, কারও চাকরি বাতিল করতে পারে না আদালত। পালটা ওএমআর শিট নষ্ট নিয়েও প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়ে এসএসসি। তাদের দাবি, ডিজিটাল তথ্য রয়েছে। তাহলে কেন চেয়ারম্যান ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ নেই বলে দাবি করলেন, প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির। এসএসসির দাবি, নাইসার কাছ থেকে ‘মিরর ইমেজ’ নেওয়া হয়েছে। এবং সেগুলি প্রকাশও করা হয়েছে।
এসএসসিকে ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের
নাইসাকে বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন যথাযথভাবে টেন্ডার ডাকা হয়নি, সে প্রশ্নও তোলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “নাইসাকে বরাত দেওয়া হল। নাইসা আবার আরও এক সংস্থাকে টেন্ডার দিল। কেন বলেননি নিজে না পারলে বরাত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় নথি কেন অন্যের হাতে তুলে দিলেন। তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ এসএসসির। এটা নিরাপত্তা লঙ্ঘন। এসএসসি দায়িত্ববানের মতো কাজ করেনি।”
সরকারি চাকরির প্রতি বিশ্বাস উঠে যাবে: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “নিম্নবিত্তদের আস্থা সরকারি চাকরি। এসব দেখলে তো সরকারি চাকরির প্রতি বিশ্বাস উঠে যাবে সকলের।”
যোগ্য-অযোগ্য আলাদা তালিকা প্রকাশ সম্ভব: SSC
সিবিআইয়ের তথ্যের উপর ভিত্তি করে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা তালিকা করা সম্ভব বলে সুপ্রিম কোর্টে জানায় এসএসসি। নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে এসএসসি আরও জানায়, কমিশনের সুপারিশ ছাড়া চাকরি পেয়েছিল, তাদের সমর্থন করে না কমিশন।
সুপারনিউমেরিক পদ নিয়ে রাজ্যের সওয়াল
এদিকে, সুপারনিউমেরিক পদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জোরাল সওয়াল রাজ্যের। কোনওভাবেই আদালতকে বোকা বানাতে চায়নি রাজ্য, দাবি আইনজীবীর। তাঁর ব্যাখ্যা, শুধুমাত্র চাকরি বাতিলের পর ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ করতে ৬ হাজার ৮৬১টি সুপারনিউমেরিক পদ তৈরি করা হয়। ২০১৬ সালের নিয়োগের ছবছর পর ২০২২ সালে কেন অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হল, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। “কোনও খারাপ অভিসন্ধি ছিল না”, সওয়াল রাজ্যের। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজ্য কোনওভাবেই যুক্ত নয় বলেও সওয়াল আইনজীবীর।
রাজ্যের আইনজীবীর সওয়াল
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজ্যের অবস্থানও স্পষ্ট করেন আইনজীবী। তিনি জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে SSC। রাজ্যের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। রাজ্য শূন্যপদ নির্ধারণ করে। আর নিয়োগের পর বেতন দেয়। রাজ্যের আইনজীবী সুপারনিউমেরিক পোস্ট নিয়েও সওয়াল করেন। তিনি বলেন, “সুপারনিউমেরিক পোস্ট নিয়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ এই পদ নিয়ে আগেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই স্থগিতাদেশ দিয়েছে।”
মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে রাজ্যের সওয়াল
কোনও দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে কিনা, প্রধান বিচারপতির সেই প্রশ্ন তোলেন। রাজ্যের আইনজীবী সাফ জানান, “পাওয়া যায়নি।” মন্ত্রিসভা শুধুমাত্র ওয়েটিং লিস্ট থেকে সুপারনিউমেরিক পদে নিয়োগের কথা বলেছিল বলেও সওয়াল আইনজীবীর। হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কোনও বক্তব্য না শুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, মন্ত্রীদের পাশাপাশি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলও সিবিআই তদন্তের আওতাভুক্ত। “এটা সংসদীয় গণতন্ত্র?”, প্রশ্ন আইনজীবীর।সওয়াল জবাব শোনার পর তিন বিচারপতি বেশ কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।
প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে বাতিল হয়েছে ২০১৬-র এসএসসি (SSC) প্যানেল। চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষককর্মী। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল। গত শুনানিতে প্রশ্ন উঠেছিল সুপার নিউমেরারি পদ তৈরি নিয়েও। হাই কোর্ট এই নিয়ে সিবিআইকে তদন্ত করতে বলেছে। তবে প্রথম দিনের শুনানিতে সেই তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ। আদালত নির্দেশ দেয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত সিবিআই কোনও কঠোর পদক্ষেপ করতে পারবে না। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল সোমবার পর্যন্ত।
গতকাল শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে এসএসসির ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল মামলা শুনানি ছিল। কিন্তু অন্য মামলার দীর্ঘ শুনানির জেরে চাকরি বাতিল মামলার শুনানি এদিন সম্ভব হয়নি বলে খবর। ফলে মঙ্গলবার একদম শুরুতেই এই মামলার শুনানি। এই ২৬ হাজার চাকরিহারার মধ্যে গ্রুপ ডি-র কর্মীরাও রয়েছেন। তাঁদের আইনজীবী এদিন মামলাটি একবার উত্থাপন করেছিলেন। সেই সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, কয়েকটি ছোটখাটো বিষয় আছে, সেগুলি শোনার পর এই মামলা শুনবেন। কিন্তু অন্য মামলার দীর্ঘ শুনানির জেরে ওইদিন আর এই মামলার শুনানি সম্ভব হয়নি। তার পরিবর্তে মঙ্গলবার সকাল ১১টা ১৬ নাগাদ শুরু হয় সুপ্রিম শুনানি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.