সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক পক্ষের প্রতিশ্রুতি তারা বিনামূল্যে টিভি দেবে। প্রতিদ্বন্দ্বী পাল্টা জানিয়েছে, তারা দেবে ল্যাপটপ। শর্ত একটাই ভোটটা দিতে হবে। গত ১৫ বছরে ভোটারদের তুষ্ট করতে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে দান-খয়রাতির প্রতিযোগিতা খুব খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে। এআইএডিএমকে এবং ডিএমকের এই অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় আখেরে ক্ষতি হচ্ছে তামিলনাড়ুর আম নাগরিকের। তাদের মাথায় ঘুরিয়ে বসছে ঋণের বোঝা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই তথ্য সামনে এসেছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, সামাজিক প্রকল্পের অজুহাতে তামিলনাড়ুর দলগুলি যেভাবে এগোতে চাইছে তাতে ঋণের বোঝা চেপেছে প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি। এভাবে চলতে থাকলে আরও ঋণের ফাঁসে ডুববে তামিলনাড়ু।
ভোটের রাজনীতি। তার জন্য সস্তায় জনপ্রিয়তা খোঁজার চেষ্টা দেখা যায় দেশের নানা প্রান্তে। কোষাগারের ওপর কতটা চাপ পড়ে তা রাজনৈতিক দলগুলি জানতেও চায় না। এজন্যই উত্তরপ্রদেশে পড়ুয়াদের বিনামূল্যে ল্যাপটপ দেওয়া হয়। ২৮ ঘণ্টা অনশন করে ১৪ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেন শিবরাজ সিং চৌহানরা। দেশের দক্ষিণ প্রান্তে এই প্রবণতা আরও খারাপ পর্যায়ে। তামিলনাড়ুতে ২০০৬ সালে ডিএমকে বিনামূল্যে টিভি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। পাঁচ বছর পর ডিএমকের রাস্তায় হেঁটে আরও দরাজ হয় এআইএডিএমকে। ল্যাপটপ, গ্রাইন্ডার, ফ্যান, আরও অনেক কিছুই বিনামূল্যে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন জয়ললিতা। ২০১৬ তে দু’দলই পাইয়ে দেওয়ার আরও কদর্য প্রতিযোগিতায় নামে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে এই পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির জন্য আর্থিক ঘাটতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তামিলনাড়ুতে। সমাজকল্যাণ প্রকল্পে বিশাল অঙ্কের খরচ করেছে তামিলনাড়ু। যার জেরে ঋণের বোঝা ২.৫৬ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। গত পাঁচ বছরে এই খাতে ৩৩,৮০০ কোটি টাকা বেড়েছে। এডিএমকে এবং ডিএমকের মধ্যে নিয়ে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা চলছে কয়েক বছর ধরে। টিভি, মিক্সি, নগদ, গ্যাস ওভেন, জমি, দু টাকা দরে চাল, সাইকেল, শাড়ি বা ধুতি। খয়রাতির তালিকায় আরও অনেক কিছু আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে করুণানিধির জন্য এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন তামিলরা। যাকে অনুসরণ করেন জয়ললিতা। ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির ফলে পিছনের দিকে হাঁটছে তামিলনাড়ু।
সরকারের দাবি শুধুমাত্র বিনামূল্যে কিছু দেওয়ার জন্য এই অবস্থা হয়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়কের মতো ক্ষেত্রর জন্য এটা করতে হয়েছে। তামিলনাড়ুর এক পঞ্চমাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে রয়েছেন। এই শ্রেণির ভোটারদের খুশি করতেই রাজনীতিবিদদের এত দৌড়াদৌড়ি। যার ফলে ঋণের ফাঁস আরও চেপে বসেছে। প্রকৃত প্রয়োজন ছেড়ে সস্তায় জনপ্রিয়তার পথ খোঁজা হচ্ছে। এর জন্য গত এক বছরের তুলনায় ঘাটতি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এই মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গের পর তামিলনাড়ু সবথেকে বেশি ঋণের ভারে রয়েছে তামিলনাড়ু। তবে এই রাজ্যের বৃদ্ধির হার ঈর্ষণীয়। জিডিপিতে দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। অটোমোবাইল, রাসায়নিক, পোশাকের মতো ক্ষেত্রে দেশে সামনের সারিতে তামিলনাড়ু। ওই রাজ্যের বনিকসভার আক্ষেপ প্রশাসনের দান খয়রাতির জন্য অনেক এগিয়ে থেকেও পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.