সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তালিবানের আফগানিস্তান (Afghanistan) দখল যেন নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিজেপির হাতে। কোভিড, পেগাসাস, কৃষি আইন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে কেন্দ্র যখন কোণঠাসা, তখন আফগানভূমে তালিবান হানা যেন নিস্তার পাওয়ার পথ খুঁজে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা গেরুয়া শিবিরকে। এমনিতে বিজেপির রাজনীতির একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পাকিস্তান তথা হিন্দু-মুসলিম বিভাজন। আফগানিস্তানে তালিবান শাসন সেই বিভাজনের লক্ষ্যে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিজেপির হাতে।
শান্তিপ্রিয় ভারতবাসী তালিবানি শাসন যে পছন্দ করে না, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত কয়েকদিনে টেলিভিশন তথা সংবাদমাধ্যমে তালিবানি (Taliban) অত্যাচার দেখে জঙ্গিদের প্রতি ভীতি এবং ঘৃণা দুইই তৈরি হয়েছে ভারতবাসীর মনে। এবার সেটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই বিজেপি (BJP) নেতারা বলা শুরু করেছেন,”মোদির মতো শক্তিশালী নেতা না থাকলে ভারতের অবস্থাও ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের মতোই হবে।” এমনকী দেশের বেহাল আর্থিক অবস্থা, বা পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে আফগানিস্তান জুজু। ভোপাল এবং বিহারের দুই বিজেপি নেতা প্রকাশ্যেই পেট্রলের দাম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আফগানিস্তানে চলে যাওয়ার নিদান দিয়েছেন।
তালিবান নিয়ে এখনও আন্তর্জাতিক মহলে অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি ভারত। কিন্তু তাতে কী! দেশের অন্দরে নাম না করে এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে রীতিমতো তুলোধোনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ কখনও আস্থা তথা বিশ্বাসকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে না। বিভেদকামী শক্তিরা সন্ত্রাসের মাধ্যমে সাম্রাজ্য বিস্তার করলেও, এদের অস্তিত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয় না। শুধু মোদি নন, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাও (JP Nadda) ইতিমধ্যেই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, শুধু বিজেপির হাতেই দেশ সুরক্ষিত। শনিবারই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি উত্তরাখণ্ডের এক সৈনিক সম্মান অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, “নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই ভারত শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত।” দেশ যে আজ উন্নতির পথে এগোতে প্রস্তুত সেটাও মোদির দৌলতেই। বোঝাতে চেয়েছেন নাড্ডা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিজেপির আইটি সেল বোঝাতে চেষ্টা করছে, আজ পাকিস্তান, আফগানিস্তান যে সন্ত্রাস সমস্যায় বিপর্যস্ত, সেটা শুধু ভুল নীতি, আর যোগ্য নেতার অভাবে। এবং মোদি না থাকলে ভারতেও সেই পরিস্থিতিই সৃষ্টি হতে পারে।
এখনও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা নরেন্দ্র মোদিই। রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi), মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা আগের তুলনায় জনপ্রিয়তা বাড়ালেও মোদির হাতে হাত দেওয়ার কেউ নেই। কিন্তু, লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর একধাক্কায় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে(এক সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা অনুযায়ী)। তাছাড়া সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনগুলিতেও শুধু মোদি ম্যাজিকে তেমন কাজ হয়নি। অথচ, এই মুহূর্তে বিজেপির সবচেয়ে বড় ইউএসপিই হল মোদি ফ্যাক্টর। তাই এই মোদি ফ্যাক্টরকে চাঙ্গা করতে শান্তিপ্রিয় ভারতবাসীর তালিবান ভীতিকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। আসলে, সামনেই উত্তরপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যের ভোট। তার আগে মোদির জনপ্রিয়তা আগের মতো হওয়াটা জরুরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.