সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় রাজনীতিতে নক্ষত্রপতন! তিন ঘণ্টা আগেও টুইটারে ‘অ্যাক্টিভ’ ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধে ঠিক ৭.২৩ মিনিটে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার বিলোপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছিলেন, “এই দিনটা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম।” অপেক্ষা মিটতেই যেন বিদায় নিলেন তিনি। জীবনের শেষ টুইটটি করার পর। হঠাৎই বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছোটা এবং চিকিৎসকের আপ্রাণ চেষ্টাকে বিফল করে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়া। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সব শেষ। টিভির স্ক্রোল থেকে শুরু করে মোবাইলের আপডেট। বিগ ব্রেকিং–প্রয়াত সুষমা স্বরাজ।
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী। তিনবারের বিধায়ক। ন’বারের সাংসদ। দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। দেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী। ৬৭ বছরের সুষমা স্বরাজের গোটা কেরিয়ারটাই যেন একটা বর্ণময় কাহিনি। প্রতি অধ্যায়ে চমক। উত্থান এবং শুধুই উত্থানের অবিশ্বাস্য নজির। বিশেষ করে ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর জুড়িদার মেলা ভার। সংসদের অলিন্দই হোক বা আন্তর্জাতিক মঞ্চ-সুষমার মিষ্টি হাসি, সুব্যবহার, আন্তরিক এবং অমায়িক কথন, তাঁকে বরাবরই অন্যদের থেকে ব্যতিক্রমী করে রেখেছিল। বিজেপির ডাকসাইটে নেত্রী হলেও শাসক থেকে বিরোধী শিবির, সকলের কাছেই প্রিয় পাত্রী ছিলেন। আর এই ক্যারিশমা মৃত্যুর পরও জিইয়ে রাখতে ১০০ শতাংশ সফল সুষমা।
১৯৫৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার আম্বালা ক্যান্টনমেন্টে জন্ম সুষমার। সংস্কৃত এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পর সুষমা পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। হরিয়ানা থেকে পরপর তিনবার সেরা বক্তা (হিন্দি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনকী, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও এক বছর সেরা বক্তার সম্মান অর্জন করেছিলেন। তখনই আভাস মিলেছিল তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতার, যা পরে রাজনীতিতে সুষমার ট্রেডমার্ক স্টাইল হয়ে দাঁড়ায়। সুষমা তিন বছর আম্বালা ক্যান্টনমেন্টের এসডি কলেজে এনসিসির সেরা ক্যাডেটের সম্মান পেয়েছিলেন। সেরা শিক্ষার্থীর পুরস্কার এবং স্বর্ণপদকও জিতেছিলেন।
১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসাবে প্র্যাকটিস শুরু করেন সুষমা। তবে তারই আগে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছিল। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য হিসাবে রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সুষমা। দেশে জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার পর যোগ দেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। অল্প দিনেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিক হিসাবে মানুষের মনে জায়গা করে নেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ন’বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন সুষমা স্বরাজ। ১৯৭৭ সালে হরিয়ানার সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হন।
সুষমা স্বরাজই ছিলেন দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৯৮ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় ২০০৩ সাল থেকে দেড় বছর তিনি ছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। তারও আগে ২০০০ সাল থেকে তিন বছরের জন্য সুষমা ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুষমার চওড়া কাঁধেই ন্যস্ত হয়েছিল বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব। যা তাঁকে ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তোলে।
ইন্দিরা গান্ধীর পর সুষমাই দেশের দ্বিতীয় মহিলা বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু যা তাঁকে আর সবার থেকে আলাদা করেছে, তা হল মন্ত্রিত্বের পিছনে তাঁর সহানুভূতিশীল চরিত্র। বিদেশ-বিভুঁইয়ে কেউ বিপদে পড়লেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কাছে সাহায্য চাইতেন সাধারণ মানুষ। আর দ্রুত তাতে সাড়া দিয়ে, তাঁদের মন জিতে নিতেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী। ২০১৯ লোকসভা ভোটে শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি সুষমা।
এমন বর্ণময় মানুষের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি বলেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷
বেলা তিনটেয় চোখের জলে সুষমাকে বিদায় জানাবে গোটা দেশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.