সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বর্ষণমুখর রাতে নদীতে একটাও নৌকা নেই। সাপে কাটা ছেলেকে বাঁচাতে কৃষক বাবা সাঁতরে পেরোলেন নদী। ১০ মিনিটের পথ পেরোতে সময় গড়িয়ে গেল দেড় ঘণ্টা। ভেবেছিলেন ছেলেকে সুস্থ করেই বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছাতেই ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিলেন। অনেক্ষণ আগেই মৃত্যু হয়েছে শিশুপুত্রের। হাড়ভাঙা পরিশ্রমও তাকে বাঁচাতে পারল না। মর্মান্তিক ঘটনাটি সুরাটের জঙ্গলঘেরা জেলা ডাং-এর দাভদাহাদ গ্রামের।
[পড়াতে এসে মা-মেয়েকে লাগাতার ধর্ষণ, গ্রেপ্তার গৃহশিক্ষক]
জানা গিয়েছে, সারা বছর যেমনই চলুক না কেন বর্ষার জল পড়লেই ভয়াবহ রূপ নেয় গ্রাম লাগোয়া নদী খাপরি। টানা বর্ষণে নদীর জল এখন বিপদ সীমার উপর থেকে বইছে। ভয়ে বাসিন্দারা এলাকার বাইরে যাওয়ার চেষ্টাই করছেন না। কিন্তু উপায় ছিল না ওই কৃষকের। রবিবার রাতে ছেলে রোহিতকে ঘুমের মধ্যেই বিষধর গোখরো সাপে কামড়ায়। যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে বছর আটেকের শিশুপুত্র। তড়িঘড়ি প্রতিবেশীদের ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। ১০৮ নম্বরে ফোন করে জরুরি পরিষেবাতেও খবর দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রাম লাগোয়া খাপরির ভয়াবহতায় সবাই পিছু হটে। তাইবলে ছেলেকে তো আর ফেলে রাখা যায় না। কোনও উপায় দেখতে না পেয়ে অটোরিকশর টায়ার টিউবেই মরণাপন্ন ছেলেকে শুইয়ে দেন তিনি। তারপর ভয়াল খাপরি সাঁতরে ওপারে অহওয়া সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেন। জলের তীব্র স্রোতের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে ৯০ মিনিটে পেরিয়ে যান নদী। পাড়ে উঠে ছেলেকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে কোনও সাড়া পাননি চিন্তিত বাবা। ভেবেছিলেন জ্ঞান হারিয়েছে শিশুপুত্র। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জরুরি পরিষেবার অ্যাম্বুল্যান্স। অচৈতন্য ছেলেকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অ্যান্টি ভেনাম দিয়ে শিশুটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কৃত্রিম উপায়েও শ্বাস-প্রশ্বাস চালুর চেষ্টা হয়। তবে তাতে কোনও লাভ হয়নি। চিকিৎসকদের পরিষেবায় কোনওরকম সাড়া মেলেনি রোহিতের। হাসপাতালে নিয়ে আসার অনেক আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, সাপে কাটার ৪০ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টিভেনাম দেওয়া হলে রোগীকে বাঁচানো যেত। এক্ষেত্রে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালে আনতে আনতে শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গই কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিষেধকের কোনও প্রভাব পড়েনি। মৃত শিশুটিকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, বিষধর গোখরো সাপের কামড়েই রোহিতের মৃত্যু হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ড্যাং-এর জেলাশাসক বি কুমার বলেন, চলতি বছরে সাপের কামড়ে এটাই প্রথম মৃত্যু। দাবদাহাদ গ্রামে মাত্র ২৫টি পরিবারের বসবাস। গ্রামের কাছের সদর বলতে পিম্পরি ও অহওয়া। গ্রাম লাগোয়া খাপরি নদিতে সারাবছর জলের চিহ্নমাত্র থাকে না। ১০ মিনিট হাঁটলেই যে নদী পেরিয়ে যাওয়া যায়, বর্ষাতেই তার চেহারা ভয়ঙ্কর হয়ে যায়। গ্রাম ছেড়ে বেরনোই তখন দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। জঙ্গল ঘেরা গ্রামে এই সময় সাপের উৎপাতও বেড়ে যায়। কোনওরকম দুর্ঘটনা ঘটলে নদী পেরিয়ে এপাড়ে আসাই দায় হয়ে ওঠে। সদরে আসার আরও একটি রাস্তা দাবদাহাদে রয়েছে। তবে তা জঙ্গলের পথ। টানা বর্ষণে সেই রাস্তার চিহ্নমাত্র নেই। খাপরি বিপদসীমা ছাড়ানোয় প্রাণ হাতে করেই দিন কাটাচ্ছেন গ্রামবাসী। তবে নদী পেরিয়ে কোনওরকমে পাড়ে উঠতে পারলেই হাসপাতাল পর্যন্ত মিলবে জরুরি পরিষেবার সুবিধা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.