সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর, রাত ৮টা। ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। আচমকা ঘোষণায় বাতিল হয় পুরনো ১০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট। পরবর্তীকালে সেই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এই বিষয়ে একাধিক মামল হয় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানাল, নোট বাতিলের (Demonetisation) সিদ্ধান্তে আইনত বৈধ ছিল। আরও বলা হয় রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে ছ’মাস ধরে আলোচনার পরেই নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। এইসঙ্গে এদিন নোটবন্দী বিরোধি যাবতীয় মামলা খারিজ করে শীর্ষ আদালত।
কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। যেমন, শুধু মোদির (PM Modi) সিদ্ধান্ত? নাকি রিজার্ভ ব্যাংকের (RBI) সঙ্গে আলোচনার পরে ঘোষণা, সংসদীয় প্রক্রিয়া কী ছিল? নোট বাতিলের ফলে কী কী লাভ হয়েছে দেশের? এমন প্রশ্নে মোট ৫৮টি মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। গত কয়েক মাসে ধরে যার শুনানি চলছিল বিচাপতি আবদুল নাজিরের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানাল, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক কোনও সিদ্ধান্তকে পালটে দেওয়া যায় না। এমনকী কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বদলানো যায় না। এছাড়াও রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার পরেই যে সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র, তাও জানিয়েছেন বিচারপতিরা।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের মামলা চলছিল বিচারপতি আবদুল নাজির, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি এএস বোপান্না, বিচারপতি ভি সুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি বিভি নাগারত্নের বেঞ্চে। আগেই জানা গিয়েছিল বিচারপতি আবদুল নাজির ৩ জানুয়ারিতে অবসর নেবেন। তার আগে ২ জানুয়ারি এই মামলার রায় ঘোষণা হবে। সেই মতোই সোমবার নোট বাতিল মামলার রায় জানাল সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায় মোদি সরকারের পক্ষেই গেল। এদিন বিচারপতিদের বেঞ্চ জানায়, ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোট বদলের জন্য ৫২ দিন সময় দিয়েছিল কেন্দ্র। তা ছিল যথেষ্ট সময়।
আদালত নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে মোদির পক্ষে রায় দিলেও খানিক ভিন্নমত বিচারপতি বিভি নাগারত্নের। তিনি জানান, নোটবন্দির মতো সিদ্ধান্ত সরকার ঘোষণা করেছে। যা আদতে সংসদের মাধ্যমে আসা উচিত ছিল। উল্লেখ্য, ৬ বছর আগে ২০১৬ সালে আচমকা ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরকারের দাবি ছিল, সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত, কালো টাকা এবং কর ফাঁকি রুখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদিও এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশ জুড়ে সমস্যার মুখে পড়েন সাধারণ মানুষ। এটিএমের লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়।একপক্ষের দাবি হটকারী সিদ্ধান্তে লাভ হয়নি দেশের। সেই সূত্রেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। গত সেপ্টেম্বরে এই সংক্রান্ত শুনানিতে রাজি হয় আদালত। ১২ অক্টোবরে হয় প্রথম শুনানি। ওই দিন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, এই বিষয়ে জবাবদিহি করা কেন্দ্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে দেশের আমজনতার আদৌ লাভ হয়েছে কি না, এই বিষয়ে ৯ নভেম্বরের মধ্যে হলফনামা মারফত জানাতে হবে মোদি সরকারকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.