স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: বাংলা-সহ আজ গোটা দেশের নজর সুপ্রিম কোর্টের দিকে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আজ, সোমবার দিনের শুরুতেই আর জি কর কাণ্ডে (RG Kar Incident) স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি হবে। গত বৃহস্পতিবার শুনানি থাকলেও প্রধান বিচারপতির অসুস্থতার জন্য তা হয়নি। ফলে সোমবার আদালত কী নতুন নির্দেশ বা পর্যবেক্ষণ করে, সেদিকেই তাকিয়ে সবাই। পাশাপাশি নজর থাকবে সিবিআইয়ের জমা দেওয়া স্ট্যাটাস রিপোর্টের দিকেও।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যখন দেশজুড়ে বিতর্কের আবহ, সেই সময় স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে হয় মামলার প্রথম শুনানি। দেশজুড়ে যেভাবে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর আক্রমণ হচ্ছে, তা রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেয় শীর্ষ আদালত। গঠিত হয় জাতীয় টাস্ক ফোর্স। চিকিৎসদের সুরক্ষাকে জাতীয় বিষয় হিসাবে উল্লেখ করে অবস্থানরত ডাক্তারদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে আদালত। আর জি করের নিরাপত্তায় পুলিশের উপর ভরসা না রেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও গোটা ঘটনায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কী ভূমিকা, কেন তাঁকে অন্য হাসপাতালে সমমর্যাদার দায়িত্ব দেওয়া হল, পরিবারকে কেন প্রথমে আত্মহত্যার খবর দেওয়া হল, কেন এত দেরিতে পুলিশ মামলা রুজু করল–এই ধরনের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান বিচারপতি। একইসঙ্গে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করার কথা বলে আদালত। বলা হয়, যেসব চিকিৎসক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে বলা হয়, নির্দিষ্ট আইন ও নিয়ম মেনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলতে পারে, কিন্তু তদন্তে ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না।
আদালতের নির্দেশে ২২ আগস্টের শুনানির আগে সিবিআই যে প্রাথমিক স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছিল, তাতে দাবি করা হয় যে, অপরাধস্থল বদলে ফেলা হয়েছে। যদিও রাজ্যের তরফে টাইমলাইনের উল্লেখ করে বলা হয়, গোটা ঘটনার ভিডিওগ্রাফি করা রয়েছে। আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল সিবিআই ও রাজ্য– দুই পক্ষের আইনজীবীকেই। রাজ্যের তরফে কপিল সিব্বল আদালতের নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে তদন্তের সঙ্গে জড়িত কোনও দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসার পরেরদিনের শুনানিতে উপস্থিত থাকেন।
তবে, বহু প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। তার ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আর জি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঞ্জয় রাইকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। তদন্তভার হাতে পেয়ে এখনও আর কাউকে গ্রেপ্তার করেনি সিবিআই। তাহলে সঞ্জয় কি একাই দোষী, নাকি নেপথ্যে আরও কেউ? ব্যক্তিগত বিকৃতিজনিত পৈশাচিক মনোবৃত্তির পরিণতিই কি এই অঘটন? নাকি অন্য কোনও কারণে মেয়েটিকে সরিয়ে দিতেই এই নারকীয় নির্যাতন? মোটিভ ঠিক কী? পাশাপাশি, সোশাল মিডিয়ায় ঘন ঘন ছবি ভাইরাল। আদালতেও সরব সিবিআই। অভিযোগ, মূল ঘটনা ধামাচাপা দিতেই বিকৃত করা হয়েছে ঘটনাস্থল। জবাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ। সত্যিই কি লোপাট করা হয়েছে তথ্যপ্রমাণ, কী বলছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির কথা থাকলেও প্রধান বিচারপতির অসুস্থতায় তা হয়ে ওঠেনি। এই নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা দেয় হতাশা। আজ, সোমবার দিনের শুরুতেই হবে আর জি কর মামলার শুনানি। তা কোন পথে এগোয়, সেদিকেই এখন তাকিয়ে আসমুদ্রহিমাচল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.