স্টাফ রিপোর্টার: ‘বাবরনামা’ লিখতে বসে সম্রাট লিখেছিলেন, ‘অর্ধেক দিনে গোটা বিশ্বের যা আয়, শুধুমাত্র সেই হিসাবেই কোহিনুরের মূল্য নির্ধারণ সম্ভব৷’
১৮৪৯ সাল৷ এক নাবালক শিখ মহারাজা দলীপ সিংয়ের কাছ থেকে চুক্তি করে ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়াকে সেই হিরে সমর্পণ করেছিলেন ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি৷ কথিত আছে, কোহিনুর কোনও সম্রাটের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্য আর সম্রাজ্ঞীর শিরে শোভা পেলে তাঁর জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে৷ আইন করে পরে তাই কোনও সম্রাটের এই হিরে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়৷
সেই হিরে নিয়েই শুক্রবার একটি জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট৷
কোহিনুর ভারতেরই সম্পত্তি৷ এই দাবিতে নতুন করে তাকে ফিরিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাটি করে হেরিটেজ বেঙ্গল৷ শুক্রবার তার শুনানিতে মামলাটি গ্রহণ করে সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর জানিয়েছেন, এই হিরে আদপে কাদের সম্পত্তি তা নিয়ে সব পক্ষের বক্তব্য আদালত শুনবে৷ তার জন্য ৪ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে কেন্দ্রকে৷ দেড় মাস বাদে এই নিয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট৷
কোনও হিরেরও সর্বোচ্চ খোয়াহিশ কোহিনুর৷ পার্সি নামের এই উচ্চারণেই রয়েছে আলোর ঝলকানি৷ যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা মামলার শুনানির মধ্য দিয়ে নতুন করে তাকে পাওয়ার আশা জাগল৷ কোহিনুরের মতো বিষয় বলেই, প্রয়োজনে তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে শীর্ষ পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা পর্যন্ত হতে পারে৷
বেঙ্গল হেরিটেজের পর তার চিফ প্যাট্রন হিসাবে এর দ্বিতীয় মামলাকারী তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক বিশিষ্ট আইনজীবী সুখেন্দুশেখর রায়৷ এদিনের শুনানি নিয়ে দিল্লি থেকে ফোনে তিনি জানান, “অন্তত ১০ বছরের গবেষণার পর এমন বিষয় নিয়ে মামলা করা হয়েছে৷ কোহিনুর যে আমাদের দেশের সম্পত্তি, তা নিয়ে সবরকম আলোচনা চেয়েই আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি৷” তিনি আরও তথ্য দিচ্ছেন, “রাজা দলীপ সিংয়ের সঙ্গে যখন এই চুক্তি হল, তখন তাঁর মাত্র ৯ বছর বয়স৷ কোনও নাবালক রাজার সঙ্গে এমন চুক্তি হতে পারে না৷ তা ছাড়া সেই চুক্তিতেই রয়েছে রাজবংশের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে হিরে সমর্পণের কথা৷ তাই তা কোনওভাবেই ব্রিটিশ সম্পত্তি নয়৷” এর আগে রাজ্যসভাতেও বিষয়টি আলোচনার জন্য উত্থাপন করেন রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক৷
এই মামলার সপক্ষে একাধিক তথ্য-প্রমাণ ইতিমধ্যে দাখিল করা হয়েছে৷ ১৮৪৯ সালে মহারাজা দলীপ সিংয়ের সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হওয়া চুক্তি, বাবরনামা-সহ একাধিক ঐতিহাসিক তথ্যে কোহিনুরের ভারতীয় সম্পত্তি হওয়ার উল্লেখ, ১৯৭০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশনে তার উল্লেখকেও তথ্য-প্রমাণ হিসাবে দাখিল করা হয়েছে৷ সঙ্গে দাখিল করা হয়েছে কোহিনুর সংক্রান্ত অন্তত ১০০ বছরের পুরনো একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন৷ সুখেন্দুশেখরবাবুর বক্তব্য, “দেশের সম্পত্তি আমরা ফেরত চাই৷ তার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ নিক কেন্দ্রীয় সরকার৷”
কোহিনুরের ইতিহাসে কথিত আছে, দক্ষিণ ভারতের ওয়ারাঙ্গেলের কাকতীয় রাজবংশের কুলদেবী ভদ্রকালীর একটি চোখের মণি ছিল এই হীরে৷ ১৩২৩ খ্রিস্টাব্দে জিয়াত-আল-দিন-তুঘলক সেই রাজাদের হারিয়ে সমস্ত সম্পত্তি দখল করে নেন৷ সেখান থেকে মুঘল সাম্রাজ্য থেকে নাদির শাহ হয়ে নানা হাত ঘুরে মণি এসে পৌঁছয় শিখ সম্রাটদের হাতে৷ শেষপর্যন্ত হিরেটিকে সম্রাট রঞ্জিত সিং পুরীর মন্দিরে দান করে দেবেন বলে মনস্থির করেন৷ দানপত্রও করেন৷ সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই সেটি চলে যায় ব্রিটিশ খাজনায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.