সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ‘ভুলে যাবেন না দেশের সংবিধানে ‘Article 21′ বলেও কিছু আছে। যা একজন নাগরিককে জীবনের ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার দেয়। সেই অধিকার কেন্দ্রীয় এজেন্সি কেড়ে নিতে পারে না।’ ছত্তিশগড়ে আবগারি দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন আমলাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় এভাবেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা করল শীর্ষ আদালত।
ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস সরকারের শাসনকালে আবগারি দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডেরেক্টরেট বা ইডি। অভিযোগ ২০১৯ থেকে ২০২২ এই সময়কালে ২১০০ কোটি টাকার আবগারি দুর্নীতি হয়েছে। এই মামলাতেই গত এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তার করা হয় তৎকালীন আইএএস আধিকারিক অনিল টুটেজাকে। সেই গ্রেপ্তারির বৈধতা নিয়ে সোমবার প্রশ্ন তুলল দেশের শীর্ষ আদালত। সোমবার এই মামলার শুনানিতে ইডির বিরুদ্ধে ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলল আদালত। প্রাক্তন আধিকারিকের আইনজীবী আদালতকে জানান, ২০ এপ্রিল এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে সকাল ১১টায় অ্যান্টি কোরাপশন ব্রাঞ্চের (ABC) অফিসে আসেন অনিল। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন উপস্থিত হন ইডির তদন্তকারীরা। সেখানেই অনিলকে সমনের নোটিস ধরানো হয় যার মেয়াদ ছিল সেদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ফলে সমনের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় তা তিনি গ্রহণ করেননি। এর পর ইডির তরফে নতুন সমনের নোটিস দেওয়া হয় এবং জানানো সাড়ে ৫টায় ইডির অফিসে হাজিরা দিতে হবে।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ABC অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের পর সেখানকার আধিকারিকরাই টুটেজাকে নিয়ে যায় ইডির অফিসে। সেখানে সারা রাত ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। এর পর ২১ এপ্রিল ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। ইডির এহেন অতিসক্রিয়তায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট। আদালত প্রশ্ন তোলে, “অ্যান্টি কোরাপশন ব্রাঞ্চে যখন এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেখানে সেই দিনই ইডির জিজ্ঞাসাবাদের কী প্রয়োজন? ইডি কীভাবে একটি তদন্তকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মাঝে সেখানে গিয়ে নোটিস দিতে পারে? এবিসির আধিকারিকরা কেন অভিযুক্তকে ইডির অফিসে নিয়ে যাবেন? এত তাড়াহুড়ো তো গুরুতর অপরাধ মামলা বা সন্ত্রাসবাদী মামলার ক্ষেত্রেও ঘটে না।” একইসঙ্গে কড়া সুরে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে আদালত বলেন, ‘ভুলে যাবেন না দেশের সংবিধানে ‘Arical 21′ বলেও কিছু আছে।’ অবশ্য আদালতের কড়া তোপের মুখে পড়ে ইডি জানায়, ‘অভিযুক্ত নিজের ইচ্ছাতেই ইডি অফিসে এসেছিলেন। তাঁকে জোর করা হয়নি।’ অন্যদিকে এই গ্রেপ্তারি অবৈধ বলে দাবি করে প্রাক্তন আমলার জামিনের দাবি জানান তাঁর আইনজীবী।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে বার বার পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে দেশের বিরোধী দলগুলি। তাদের অভিযোগ, ইডি, সিবিআই থেকে শুরু আয়কর দপ্তর-সহ দেশের সবকটি এজেন্সি কেন্দ্রের শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছে। এবং বেছে বেছে নিশানা করা হচ্ছে বিরোধীদের। খোদ আদালতেও ‘তোতাপাখি’ শব্দ শুনতে হয়েছে সিবিআইকে। এবার ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস জমানায় আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তারিতে ইডির অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল দেশের শীর্ষ আদালত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.