সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খুনের মামলায় নিহতের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি বা বয়ান দোষ প্রমাণের একমাত্র ভিত্তি হতে পারে না। বিশেষত, যেখানে ওই বয়ানের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে তিন ব্যক্তিকে খুনের দায়ে ফাঁসির সাজা হওয়া উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) এক ব্যক্তির আবেদনের শুনানিতে এমনই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)।
শীর্ষ আদালতের মত, মৃত্যুকালীন জবানবন্দির উপর ভরসা রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। মৃত্যুর আগের বয়ান মানেই তা সত্য, এমন আগাম ধারণা করে নিলে চলবে না। মৃতু্যশয্যায় কেউ সাধারণত মিথ্যা বলেন না, এমনটা ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এর কোনও আইনি ব্যাখ্যা নেই বলেও শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট বক্তব্য, যদি কোনও সংশয় থাকে বা তথ্যপ্রমাণ অন্য কথা বলে, তাহলে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দোষী সাব্যস্ত করার একমাত্র ভিত্তি হিসাবে ধরা যাবে না। সেটি খুব বেশি হলে অন্যতম প্রমাণ হিসাবে দেখতে হবে।
গত আট বছর ধরে খুনের অপরাধে কারাবন্দি ইরফান। ছেলে ইসলামুদ্দিন, দুই ভাই ইরশাদ, নৌশাদকে খুনের দায়ে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল নিম্ন আদালত। সে জন্য মৃত্যুকালীন জবানবন্দি ছিল একমাত্র প্রমাণ। ২০১৮-য় এলাহাবাদ হাই কোর্ট সাজা বহাল রাখে। সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রর বেঞ্চ এই মন্তব্য করে। ৮০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কোনও ব্যক্তি কতটা মানসিকভাবে ‘সুস্থ’ ছিলেন, প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণন। আদালত সেই যুক্তি মেনে নিয়েছে। সরকার পক্ষ সংশয়াতীতভাবে অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই ইরফানকে অবিলম্বে মুক্তির আদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
মৃত্যুকালীন জবানবন্দিও ভালভাবে যাচাই করার কথা বলেছে আদালত। শিখিয়ে দেওয়া কথা বা কল্পনার বহিঃপ্রকাশ কি না, আদালতকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। যেমন, জবানবন্দি দেওয়া ব্যক্তি মৃতু্যর অপেক্ষা করছেন কি না, বয়ান ঘটনার পরেই নেওয়া হয়েছে কি না, পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষ বক্তব্য শিখিয়ে দিয়েছে কি না। বয়ান ঠিকমতো রেকর্ড হয়েছে বা ঘটনার পারম্পর্য রয়েছে কি না, সেটাও যাচাই করতে হবে। স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেওয়া হয়েছে বা একাধিক জবানবন্দি থাকলে তাদের মধ্যে সঙ্গতি রয়েছে কি না, তা-ও মিলিয়ে দেখতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.