সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক স্নাতকোত্তর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এক যুবক। কয়েকদিন আগেই তাঁকে জামিন দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট। সেই সঙ্গেই উচ্চ আদালত জানিয়ে দেয়, নির্যাতিতা নিজেই বিপদ ডেকে এনেছিলেন। যা ঘটেছে সেজন্য তিনিই দায়ী। এবার এই পর্যবেক্ষণকেই তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। এই ধরনের মন্তব্য করার আগে সংযত হওয়া উচিত। স্পষ্ট জানাল শীর্ষ আদালত।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নয়ডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ওই নির্যাতিতা তাঁর তিন বান্ধবীর সঙ্গে দিল্লির হাউজ কাউজের একটি পানশালায় যায়। সেখানে কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। যাঁদের মধ্যে অভিযুক্তও ছিলেন। তরুণীর দাবি, রাত তিনটে পর্যন্ত তাঁরা পান করছিলেন। এবং এরপর অভিযুক্ত তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন বলে জোর করতে থাকেন। এরপর তিনি ওই যুবকের বাড়িতে ‘বিশ্রাম’ করতে যেতে রাজি হন। কিন্তু যুবক তাঁকে ‘অশালীন স্পর্শ’ করতে থাকেন। এবং শেষপর্যন্ত গুরগাঁওয়ে এক আত্মীয়ের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে ওই যুবক তাঁকে ধর্ষণ করেন বলেই অভিযোগ। অভিযুক্ত তাঁর জামিনের আবেদনে দাবি করেছিলেন, নির্যাতিতা তাঁর সঙ্গে স্বেচ্ছায় যৌন সংসর্গে লিপ্ত হয়েছিলেন। এমনকী, তাঁকে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া এবং ধর্ষণের অভিযোগও মিথ্যে বলে দাবি তাঁর।
এই মামলায় এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয়কুমার সিংকে বলতে শোনা যায়, ”আদালতের পর্যবেক্ষণ, যদি নির্যাতিতার অভিযোগ সত্যিও হয়, সেক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তে আসাই যায় যে উনিই বিপদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং যা ঘটেছে সেজন্য তিনি দায়ী।” পাশাপাশি হাই কোর্টের আরও পর্যবেক্ষণ করে যে, নির্যাতিতা যেহেতু একজন স্নাতকোত্তর ছাত্রী, সুতরাং তিনি পরিণতমনস্ক এবং পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতাও ছিল।
এহেন পর্যবেক্ষণ নিয়েই সুপ্রিম কোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়। আজ মঙ্গলবার এর শুনানিতে তীব্র ভর্ৎসনা করে বিচারপতি বিআর গাভাই ও এজি মাসিশের বেঞ্চ জানায় , “ফের এক বিচারপতির এই রকম মন্তব্য করলেন। জামিন আপনি দিতেই পারেন। কিন্তু আপনারা কী আলোচনা করছিলেন? মেয়েটি নিজে নিজের বিপদ ডেকে এনেছে? বিচারপতি হিসাবে এহেন মন্তব্য করার আগে সংযত ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। এই ধরনের পর্যবেক্ষণ কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।”
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে এলাহাবাদ হাই কোর্টের একটি অভিযোগকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। স্তন চেপে ধরা বা পাজামার দড়ি টেনে ধরা ধর্ষণের চেষ্টা নয়- এই বিতর্কিত রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতে যে মামলাটি দায়ের হয়েছিল সেটার সঙ্গে এলাহাবাদ হাই কোর্টের মূল মামলার কোনও যোগ ছিল না। তবে বিচারপতির ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া আর একটি মামলা খারিজ করে শীর্ষ আদালত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.