দীপাঞ্জন মণ্ডল, নয়াদিল্লি: হায়দরাবাদ এনকাউন্টার মামলার শুনানি হল সুপ্রিম কোর্টে। আদালতে তেলেঙ্গানা সরকারের তরফে জানানো হয় পুলিশের হাত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করে চার অভিযুক্ত। তাই বাধ্য হয়ে গুলি চালানো হয়। তাতেই এনকাউন্টারে খতম হয় তরুণী চিকিৎসক গণধর্ষণ কাণ্ডের চার অভিযুক্ত। এনকাউন্টারের প্রেক্ষিতে তেলেঙ্গানা সরকারের সমস্ত দাবি খতিয়ে দেখার পরই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় আলোড়ন পড়ে যায়। নড়েচড়ে বসে গোটা দেশ। নির্ভয়ার পর তরুণী চিকিৎসকের নির্মম পরিণতিতে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন প্রায় সকলেই। আন্দোলনের মাঝেই ঘটনার মাত্র দশদিনের মাথায় এনকাউন্টারে খতম করা হয় হায়দরাবাদ গণধর্ষণ কাণ্ডের চার অভিযুক্তকে। যদিও এনকাউন্টার নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তেলেঙ্গানা সরকার এনকাউন্টার প্রসঙ্গে যা বলছে তা সত্য কি না, সেই সন্দেহও প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। সুপ্রিম কোর্টের এনকাউন্টার মামলার শুনানিতেও একইরকম দাবি প্রধান বিচারপতির। শুনানিতে তিনি বলেন, “কী ঘটেছে তা জানার অধিকার রয়েছে সকলের।” তাই অবশ্যই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা প্রয়োজন। একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। সিসিটিভি-সহ একাধিক প্রমাণাদির ভিত্তিতে প্রাক্তন বিচারপতি ভিএস শিরপুরকরের নেতৃত্বে তিনজন বিচারপতি হায়দরাবাদ এনকাউন্টারের সত্যতা খতিয়ে দেখবেন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের তদন্ত রিপোর্ট পেশের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, যা হয়েছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছুই নয় বলেই সুর চড়িয়েছেন তেলেঙ্গানার টিআরএস বিধায়ক। জি সুনীতার দাবি, “নিজের সন্তানদের এনকাউন্টারে মৃত্যুর কথা শুনে পরিজনেরা খুবই দুঃখ পেয়েছেন। যা হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমার খুবই খারাপ লাগছে।” যদিও তেলেঙ্গানার টিআরএস বিধায়কের মন্তব্যকে মোটেও ভাল চোখে দেখছেন না হায়দরাবাদ এনকাউন্টারের সমর্থকেরা।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ নভেম্বর হায়দরাবাদের অদূরে সামশাবাদের টোলপ্লাজায় স্কুটি রেখে অন্য এক চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে যান তরুণী। রাত সাড়ে নটা নাগাদ স্কুটি নিতে গিয়ে দেখেন তার চাকা পাংচার হয়ে গিয়েছে। কীভাবে বাড়ি ফিরবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। ইতিমধ্যেই দু’জন যুবক তাঁর কাছে এসে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পরেই রাজি হয়ে যান তরুণী। ওই যুবকেরা তাঁর স্কুটি নিয়ে যায়। ফিরে এসে জানায় স্কুটি সারানো সম্ভব হয়নি। তবে তরুণী চিকিৎসককে তারপরেও বাড়ি ফিরতে সাহায্য করার আশ্বাস দেয় ওই যুবকেরা। ঠিক সেই সময় ফোনে বোনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তরুণী। তিনি জানান ভয় লাগছে। ইতিমধ্যেই আরও দু’জন যুবক টোলপ্লাজার কাছে জড়ো হয়। ওই চিকিৎসককে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে নির্জন এক স্থানে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। সেখানেই চারজন মিলে ধর্ষণ করে তাঁকে। চিৎকার থামাতে মদ্যপান করানো হয়। অত্যাচারে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার। লরিতে চড়িয়ে তাঁর দেহ অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। নম্বর প্লেট খুলে ফেলে দেওয়া হয় স্কুটির। পুলিশের দাবি, মৃত্যুর পর ওই লরিতে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে চার অভিযুক্ত। এরপর পেট্রল ঢেলে ব্রিজের নিচে পুড়িয়ে দেওয়া হয় নির্যাতিতাকে। পরেরদিন ব্রিজের নিচ থেকে গলায় থাকা গণেশের লকেট দেখে তরুণী চিকিৎসকের অগ্নিদগ্ধ দেহ শনাক্ত করেন পরিজনেরা।
এই ঘটনার প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্ত মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন এবং চিন্তাকুন্টা চেন্নাকেশাভুলু নামে চার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেল হেফাজতে থাকাকালীন ৬ ডিসেম্বর ভোররাতে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় গণধর্ষণে অভিযুক্তদের। সেখানে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। সাইদরাবাদ পুলিশের সিপি ভিসি সাজ্জানরের দাবি, ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময় পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট এবং পাথর ছুঁড়ে হামলা চালায় চারজন। বাধ্য হয়ে গুলি চালায় পুলিশ। পুনর্নির্মাণের সময় এনকাউন্টারেই খতম হয় চার অভিযুক্ত। ধর্ষণে অভিযুক্তদের যোগ্য শাস্তি হয়েছে বলেই দাবি অধিকাংশের। তবে সুপ্রিম কোর্টের এনকাউন্টার প্রেক্ষিতে তদন্তে কী তথ্য বেরিয়ে আসে সেদিকেই তাকিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.