স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে হওয়ার আয়ের হিসাব দু’সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে হবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission)। টানা তিনদিন নির্বাচনী বন্ড নিয়ে শুনানি শেষে রায় সংরক্ষিত রেখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রকে বলা হল, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত যা কিছু ত্রুটি রয়েছে, তা মিটিয়ে ফেলতে কোনও বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া তৈরি করা হোক।
এদিন আদালতের বিরক্তির মুখে পড়তে হয় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে। এখনও পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল বন্ড মারফত কত টাকা পেয়েছে, সেই তথ্য চাইলেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে পারেননি আইনজীবী অমিত শর্মা। তিনি আদালতকে জানান, কমিশন মনে করেছিল আদালতের (Supreme Court) সেই নির্দেশ শুধুমাত্র ২০১৯ সালের নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য ছিল। এর পরই চার বছর আগের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশের উল্লেখ করে বেঞ্চ বলে, সেই সময় কমিশনকে বলা হয়েছিল, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে তাদের নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond) সংক্রান্ত তথ্য কমিশনের কাছে মুখবন্ধ খামে জমা দিতে হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জমা পড়া সেই খামগুলিই আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে কমিশনকে আদালতে জমা দিতে বলা হল।
এদিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে নিজেদের প্রাথমিক মতামতও জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud), বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ। আদালতে প্রথমে হলফনামা জমা দিয়ে ও পরবর্তীতে শুনানির সময় কেন্দ্র যতই নির্বাচনী বন্ডকে স্বচ্ছ বলে দাবি করুক, তাতে যে বেঞ্চ খুব একটা সহমত নয়, তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বেঞ্চের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে। এমনটাই মত আইন বিশেষজ্ঞদের। এদিন এক সময় প্রধান বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনী বন্ড প্রক্রিয়াটি ত্রুটিমুক্ত নয়। এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করা উচিত, যার মাধ্যমে গোটা বিষয়টি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য হবে। আদালত স্পষ্ট করে দেয়, যে তারা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না, কারণ এটি পুরোপুরি আইনসভা ও সরকারের বিষয়।
দিনের শুরুতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার (Tushar Mehta) কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। জানতে চান, কেন শুধুমাত্র লাভজনক সংস্থাই বন্ডে অনুদান দেওয়ার সুযোগ পাবে না? কেন অনুদানের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হবে না? কোনও সংস্থা কীভাবে তার যাবতীয় লাভ দান করে দিতে পারে? এই সময় অদ্ভুত যুক্তি দেন সলিসিটর জেনারেল। বলেন, প্রথমে পাঁচ ও পরে লাভের সর্বোচ্চ সাড়ে সাত শতাংশ ইলেক্টোরাল বন্ডে দিতে পারত কোনও প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দেখা গেল কোনও সংস্থা যে পরিমাণ অর্থ দান করতে চায়, তা তার লাভের ১০ বা ১৫ শতাংশ। সেক্ষেত্রে হয় সে বাকি টাকাটা নগদে দিত, যা কালো টাকা। নাহলে বাকি টাকা অন্য কোনও ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে দিত। এই দু’টিই বেআইনি। স্বচ্ছতা আনতেই তাই সর্বোচ্চ সীমা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাসিমুখে প্রধান বিচারপতিকে এরপর বলতে শোনা যায়, “তাহলে কি আপনি বিশ্বাস করেন যে, এখন কেউ নগদে টাকা দেয় না?” যার উত্তর দিতে পারেননি তুষার মেহতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.