নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: উত্তরপ্রদেশের সপা-বসপা মহাজোটে শরিক কি এবার কংগ্রেসও? সপা প্রধান অখিলেশ যাদবের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আপাতত জল্পনা তুঙ্গে। সোমবার সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর মন্তব্য, সপা-বসপা জোটকে কংগ্রেসের সমর্থন করা উচিত। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সক্রিয় রাজনীতিতে অভিষেক নিয়েও জোটের পক্ষ থেকে প্রথমবার এদিনই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
অখিলেশ বলেন, “কংগ্রেস যদি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে থাকে, যদি সেটা মিথ্যা ছড়ানো না হয়, তাহলে তাদের সপা-বসপা জোটকে সমর্থন করা উচিত। আমরা ইতিমধ্যেই রায়বরেলি ও আমেঠি আসন দু’টি তাদের জন্য ছেড়ে দিয়েছি।” প্রিয়াঙ্কাকে সক্রিয় রাজনীতিতে নিয়ে আসা কংগ্রেসের মাস্টারস্ট্রোক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সপা-বসপা জোটকে কংগ্রেসের সমর্থন করা উচিত বলে অখিলেশের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে আসার ফলে একদিকে যেমন বিজেপির ঝুলি থেকে উচ্চবর্ণের ভোট কাটা যেতে পারে, তেমনি সপা-বসপার ঘর থেকে সংখ্যালঘু ভোটও কাটা যেতে পারে, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাতে, সপা-বসপা জোট খানিকটা হলেও অসুবিধার মুখে পড়ত পারে, এমন আন্দাজ করতে পেরেই অখিলেশ কংগ্রেসের দিকে হাত বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল।
কংগ্রেস অবশ্য উত্তরপ্রদেশে নিজেদের ক্ষমতায় এককভাবে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে। সেকারণেই প্রিয়াঙ্কাকেও তারা পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক ময়দানে নামিয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ‘‘আমরা এবার ফ্রন্টফুটে খেলব।” উল্লেখ্য, কংগ্রেস ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে ২১টি আসন পেয়েছিল। পরের বার মোদি ঝড়ে শুধু উত্তরপ্রদেশই নয়, সারা দেশেই কংগ্রেসের ফল খারাপ হয়েছিল। এবার দেশে মোদি হাওয়া অনেকটাই স্তিমিত বলে মনে করছে কংগ্রেস শিবির। তাই উত্তরপ্রদেশে পুরনো জায়গা ফিরে পেতে মরিয়া তারাও।
এদিকে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির কাঁটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বিজেপির সঙ্গে সেখানকার জোটসঙ্গী আপনা দল থেকে শুরু করে সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির বেশ কিছুদিন ধরেই মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের যোগী সরকারের সঙ্গে জোটসঙ্গীদের একেবারেই বনিবনা হচ্ছে না অনেকদিন ধরেই। যার আঁচ পড়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। লোকসভা নির্বাচনে এই দুই দলই এনডিএ-তে থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য সব বিবাদ শীঘ্রই মিটে যাবে বলে দাবি করেছে । দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ চলতি সপ্তাহেই লখনউয়ে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করবেন বলে কর্মসূচিও পাকা। কিন্তু শাহ-র সফরের আগেই সুহেলদেব পার্টির ওম প্রকাশ রাজভড় জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির সঙ্গে তাদের জোটের মেয়াদ আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্তই। রামমন্দির নির্মাণ নিয়েও যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন তিনি। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসাবে রাহুল গান্ধী যোগ্য ব্যক্তি বলেও মন্তব্য তাঁর। রাজভড়ের চালচলনে আগামী দিনে কংগ্রেসের হাত ধরার ইঙ্গিত দেখছে ওয়াকিবহাল মহল। মহাজোটে জায়গা না পেয়ে উত্তরপ্রদেশে ছোট ছোট দলগুলিকে নিয়ে জোট করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। এই সব দলের ভোট শতাংশ বেশ কিছু আসনে হার-জিতের ফয়সালা করতে পারে। সেই ফর্মুলাই গতবার লোকসভা নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছিলেন শাহ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.