Advertisement
Advertisement

খালি হাতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই, পরিবারকে বাঁচিয়ে শহিদ সুবেদার মদনলাল

মদনলালের জন্য গর্বিত পরিবার, বীরকে স্যালুট সেনার।

Sunjuwan terror attack: Subedar Madan Lal faced militants with bare hands, saved family
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:February 12, 2018 11:12 am
  • Updated:February 12, 2018 11:19 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাঁর হাতে একটিও অস্ত্র অবশিষ্ট ছিল না তখন। অথচ, উলটোদিকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বেপরোয়া জঙ্গিরা ক্রমশই এগিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতেও ভয়ে পিছিয়ে আসেননি সুবেদার মদনলাল চৌধুরি। ৫০ বছরের এই জওয়ানের শরীরে একের পর এক গুলি এসে লাগলেও লুকিয়ে পড়েননি তিনি। বরং নিজের ও নিজের সহকর্মীদের পরিবারকে বাঁচাতে জম্মুর সুঞ্জওয়ান সেনা ছাউনিতে শেষ নিঃশ্বাসটুকু দিয়ে লড়েছেন মদনলাল।

এই আত্মবলিদানে গর্বিত তাঁর পরিবার। চোখের জল মুছতে মুছতেও ভাই সুরিন্দর চৌধুরি জানাচ্ছেন, দাদার মৃত্যুতে যত না কষ্ট পেয়েছেন তাঁরা, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গর্ব হচ্ছে তাঁদের। কারণ, জঙ্গিদের হাতে এ কে ৪৭ থাকলেও, দাদা ভয়ে পিছিয়ে না এসে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন নিজের কন্যা-সহ গোটা পরিবারকে। সোমবার সকালে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সুবেদার মদনলাল চৌধুরির শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে। তাঁর মরদেহের সামনে স্যালুট জানান সেনার বড়কর্তারা।

Advertisement

army unedited

[৪ জঙ্গি খতম, ৩০ ঘণ্টা পর জঙ্গিমুক্ত জম্মুর সুঞ্জওয়ান সেনা ছাউনি]

এদিকে, রবিবার রাতেও সেনা ছাউনি থেকে ভেসে এসেছে গুলির শব্দ। টানা ৫১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অভিযান চালিয়ে ৪ জঙ্গিকে খতম করা গিয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেনাবাহিনীরও। শহিদ হয়েছেন ৫ জওয়ান। মারা গিয়েছেন একজন সাধারণ নাগরিকও। আহত ৬ জওয়ান ও ৬ ভারতীয়। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, সোমবার সকালেও জঙ্গিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি জারি রয়েছে। শনিবার প্রথমে দুই জঙ্গিকে মারার পরও তল্লাশি অভিযান চালায় সেনা। শনিবার গভীর রাতেই এক জইশ জঙ্গিকে খতম করে সেনা। আর তারপর রবিবার ভোরে লুকিয়ে থাকা আরও এক জঙ্গিকেও নিকেশ করে ফেলে নিরাপত্তারক্ষীরা। যদিও, প্রশ্ন উঠেছে যে, সাম্প্রতিককালে কেন বারবার সেনা ছাউনি জঙ্গিদের ‘টার্গেট’ হচ্ছে? কেননা, ২০০৩ সালে জম্মুর এই সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলায় ১২ জন সেনা নিহত হন। ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে কাশ্মীরের উরি সেক্টরে ভারতীয় জওয়ানদের তাঁবুতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল আত্মঘাতী জইশ জঙ্গি।  হামলায় ১৮ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। অথচ, গোয়েন্দারা আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, জঙ্গি আফজল গুরুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জইশ জঙ্গি সেনা অথবা নিরাপত্তাবাহিনীর উপর হামলা চালাতে পারে। এমনকী, এবার ‘আফজল গুরু স্কোয়াড’ হামলা চালায়। সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও হামলার ঘটনা রীতিমতো উদ্বিগ্ন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত।

শনিবার ভোর থেকে চলে এই ম্যারাথন সংঘর্ষ। জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে নিহত সেনাকর্মীর বাবাও। শহিদ জওয়ান মদনলাল চৌধুরি খালি হাতেই জঙ্গিদের আবাসনে ঢুকতে বাধা দেন। তাদের গুলিতে প্রাণ হারালেও জঙ্গিদের ভিতরে ঢুকতে দেননি তিনি। মদনলালের এই অসম লড়াই না করলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সেনা। সেনার বুলেটে খতম হয়েছে চার জইশ জঙ্গি। সংঘর্ষে ১৪ বছরের এক কিশোর গুরুতর জখমও হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখে এসেছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলারও গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ওই মহিলা সুস্থ রয়েছেন। ওই সেনা ছাউনির ভিতর সেনা আবাসন ও স্কুল থাকার জন্য সেখানকার বাসিন্দাদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কেননা, সেনার উপর হামলা চালানোর পরই জঙ্গিরা আবাসনের ভিতর লুকিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই কারণে, তড়িঘড়ি সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। জঙ্গি-আতঙ্ক কাটলেও এখনও রীতিমতো ভয়ে রয়েছেন সেনা পরিবারের সদস্যরা। জঙ্গি আক্রমণে সেনা পরিবারের কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন যে, ভয়ের কোনও কারণ নেই। আশার কথা শুনিয়েছেন সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসাররা। পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট দেবেন্দ্র আনন্দ জানিয়েছেন, জঙ্গিদের কাছ থেকে এ কে ৫৬ রাইফেল, গ্রেনেড-সহ প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযানের প্রথমেই সেনাবাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশনস গ্রুপ জঙ্গিদের ঘাঁটির এক অংশে কোণঠাসা করে ফেলে। পরে উধমপুর থেকে প্যারা কম্যান্ডোদের নিয়ে আসা হয়।

[জঙ্গি হামলায় রোহিঙ্গা-যোগ দেখছেন জম্মুর স্পিকার, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা]

জঙ্গিদের অবস্থান জানতে বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ও ড্রোনও ব্যবহার করে বাহিনী। এর পাশাপাশি, অভিযানের প্রথম থেকেই সেনা ছাউনির ভিতরে আটকে থাকা সেনা পরিবারের সদস্য এবং সাধারণ মানুষকে রক্ষা করাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মুফতির সুরেই হামলার নিন্দা করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিং। বলেন, “পাকিস্তানের সরাসরি ভারতের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা নেই। তাই এরকম কাপুরুষের মতো হামলা চালাচ্ছে।” এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং সেনাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গোটা এলাকায় বিশাল পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে, জারি রয়েছে সতর্কতাও। এলাকাজুড়ে একেবারে থমথম অবস্থা। রবিবার সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান সেনাপ্রধান। বৈঠক করেন সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে। দুপুরে ঘটনার তদন্তে ওই সেনা ছাউনিতে পৌঁছয় এনআইএ। সেনা ছাউনি বারবার আক্রমণের নিশানা হওয়ার জন্য তদন্তকারী দল প্রথমে খতিয়ে দেখছে যে, কীভাবে জঙ্গিরা কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে ছাউনির ভিতরে ঢুকে পড়ল। এর পিছনে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, সে দিকেও নজর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী দলের পদস্থ অফিসার।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement