সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০০৩ সালে মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার পথে মহাশূন্যেই হারিয়ে গিয়েছিলেন কল্পনা চাওলা। পৃথিবীতে ঝরে পড়েছিল শুধু ভস্ম! ২২ বছর পর, মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে রকেটে করে পৃথিবীর পথে আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস ও তাঁর সহকর্মী বুচ উইলমোর। বোন যেন নিরাপদে ফিরে আসেন সেই প্রার্থনা করেই গুজরাটের বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন খুড়তুতো দাদা দীনেশ রাওয়াল। আয়োজন করা হয়েছে যজ্ঞের।
সুনীতাদের মহাকাশ ‘ভ্রমণে’র পরিকল্পনা ছিল মাত্র আটদিনের। তারপর আবার মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু যন্ত্র যখন বিকল হয়, তখন উন্নতমেধার মানুষেরও কিছু করার থাকে না। ফলে মহাকাশেই আটকে পড়েন নাসার দুই নভোচর। আর সেই যান্ত্রিক ত্রুটির হাতেই বন্দি হয়ে ৯ মাস মহাকাশ স্টেশনে কাটাতে হল তাঁদের। পৃথিবীর মতো দিনের ২৪ ঘণ্টা হিসেব হয়ত ছিল না। কিন্তু ধৈর্য ধরে ৯ মাসের ‘অনন্তকাল’ শূন্যে অতিবাহিত করতে হয়েছে। অবশেষে বুধে তাঁরা পা রাখবেন পৃথিবীতে। মেয়ের ঘরে ফেরা নিয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত সুনীতার পরিবার, তেমনই চাপা উৎকণ্ঠাও রয়েছে।
এখন প্রতিটা মুহূর্ত শুধু ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছে সুনীতার আত্মীয়রা। এনিয়ে সংবাদমাধ্যমে দীনেশ রাওয়াল জানান, “সুনীতার মা, ভাই ও বোন-সহ পরিবারের সবাই খুশি যে ও বাড়ি ফিরছে। আমাদের পুরো পরিবার আনন্দিত এবং আমরা অধীর আগ্রহে সুনীতা ফিরে আসার অপেক্ষা করছি। আমরা ওর নিরাপদ যাত্রার জন্য প্রার্থনা করছি। অনেক মন্দির পুজো দিয়েছি। এটি আমাদের জন্য একটা বড় দিন। সুনীতা গোটা দেশের গর্ব। আমরা ওর ফিরে আসার জন্য যজ্ঞ। সুনীতা ফিরে আসার পর আমরা মিষ্টি বিতরণ করব।”
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার যখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়, ভারতীয় সময় তখন সকাল প্রায় ৮ টা ১৫। স্পেস স্টেশন ও ফ্যালকন নাইন রকেটকে ডক করে প্রথমে সমস্ত যন্ত্রাংশ লক করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ যাতে বাইরের বাতাস ভিতরে আসতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা হয়। সুনীতা, বুচরা উপযুক্ত পোশাক পরে রকেটে প্রবেশ করেন। তারপর শুরু হল আনডকিংয়ের প্রক্রিয়া। ১২টি লক খুলে দেওয়া হয়, তাতে স্পেস স্টেশন ও রকেট মডিউলকে পৃথক করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে স্পেস স্টেস স্টেশন থেকে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে সরে যায় ফ্যালকন নাইন। এরপর পৃথিবী থেকে ৪২৭ কিলোমিটার দূর থেকে রকেট যাত্রা শুরু করে পৃথিবীর দিকে।
টানা ১৭ ঘণ্টা ধরে যাত্রাপথের শেষ কয়েকঘণ্টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবী থেকে ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে রকেট থেকে মডিউলটি পৃথক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তা প্রবেশ করায় এই সময়ে গতিবেগও বেশি থাকবে। উষ্ণ হাওয়া, প্লাজমা, রেডিও তরঙ্গ – সবকিছুর প্রভাবে ধীরে ধীরে প্রোপেল্যান্ট অর্থাৎ রকেটের মূল চালিকাযন্ত্রটি পৃথক হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে উলটোমুখী হয়ে রকেটের মডিউল নভোচরদের নিয়ে হু হু গতিতে নেমে আসতে থাকবে পৃথিবীর দিকে। শেষদিকে গতি কমতে থাকবে। তখন মসৃণ অবতরণের সময়। মডিউল থেকে প্যারাশুটে নভোচররা বেরিয়ে আসবেন, ঝাঁপ দেবেন ফ্লোরিডা উপকূলের জলভাগে। সেখানে তৈরি থাকবে জাহাজ, কপ্টার। নভোচরদের সাবধানে নামিয়ে আনা হবে। এখন পৃথিবীতে সুনীতাদের এই সফল অবতরণের অপেক্ষায় সকলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.