সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পি চিদম্বরমের পর এবার কি লক্ষ্য শশী থারুর? ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ আদালতে যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্ত্রী সুনন্দা পুষ্কর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী দল আদালতকে জানিয়েছে, সুনন্দা পুষ্কর আত্মহত্যা করলেও, তাঁর পিছনে প্ররোচনা ছিল থারুরের।
দিল্লি পুলিশের দাবি, স্ত্রীর উপর অত্যাচার করতেন শশী থারুর। যখন-তখন চলত মারধরও। এমনকী, রহস্যমৃত্যু কিছু দিন আগেও স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল সুনন্দার। শেষপর্যন্ত বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলেও সুনন্দার সেই চরম পদক্ষেপ করার পিছনে প্ররোচনা ছিল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা থারুরেরই। তা ছাড়াও পাক সাংবাদিক মেহের তারারের সঙ্গে থারুরের যে ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক ছিল, তা জেনে ফেলেছিলেন সুনন্দা। আর তার পর থেকেই হতাশায় ভুগতেন তিনি। মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েছিলেন। শুধু তাই নয়। সুনন্দার হাত, পা মিলিয়ে গোটা শরীরে মোট ১৫টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভোঁতা কোনও অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলেই ক্ষতচিহ্নগুলি তৈরি হয়। খুব সম্ভবত, মৃত্যুর আগে থারুরের সঙ্গে সুনন্দার প্রবল ধস্তাধস্তিও হয়।
২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি দিল্লির লীলা প্যালেস হোটেল থেকে উদ্ধার হয়েছিল সুনন্দার নিথর দেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, বিষক্রিয়ার জেরেই মৃত্যু হয়েছিল শশী থারুরের স্ত্রীর। সেই মামলাতেই চার্জশিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে আদালতে। বুধবার তারই শুনানি ছিল দিল্লি আদালতের বিচারক অজয়কুমার কুহরের এজলাসে। থারুরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ (ক) ধারায় বধূ নির্যাতন এবং ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনেছিল তদন্তকারী দিল্লি পুলিশ। তবে বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন থারুর। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৩১ আগস্ট।
ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁর বন্ধু, মহিলা সাংবাদিক নলিনী সিংহের বয়ান রেকর্ড করেছিল দিল্লি পুলিশ। সেই বিবৃতিও এদিন আদালতে পেশ করেন সরকারি আইনজীবী অতুল কুমার শ্রীবাস্তব। অতুল জানান, নলিনী বলেছিলেন, ‘‘আমি যখন সুনন্দার ফোন পাই, তখন ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, মেহের তারার থারুরের কেউ নয়, তুমিই ওর সবকিছু। কিন্তু সুনন্দা থারুর এবং মেহের তারারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। সেই সময় ব্যাপারটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচুর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি চলছিল। সুনন্দা বলল, আইপিএল কাণ্ডেও থারুরকে খুব সাহায্য করেছিল। ও বলেছিল যে, থারুর এবং মেহেরের মধ্যে যে মেসেজ আদানপ্রদান হয়েছিল, সেগুলো ওর হাতে এসেছে। তার পরই সুনন্দা আর বাড়ি ফিরতে চায়নি। বদলে লীলা হোটেলে গিয়ে উঠেছিল। থারুর আর সুনন্দার মধ্যে সম্পর্ক শেষ দিকে খুবই খারাপ হয়ে পড়েছিল।’’
পাক সাংবাদিকের সঙ্গে থারুরের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্কের প্রমাণ দিতে আদালতে একটি ই-মেলের উল্লেখ করেন অতুল। সেখানে মেহেরকে ‘মাই ডার্লিংয়েস্ট’ বলে সম্বোধন করেছিলেন থারুর। আদালতকে অতুল বলেন, ‘‘থারুর এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করতেন। এই রকম আরও চিঠি আছে, যা পড়লে বোঝা যায় মেহের এবং থারুরের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর আর ঘনিষ্ঠ ছিল।’’ অতুলের দাবি, এই সম্পর্কের জেরেই যে কংগ্রেস নেতার সঙ্গে সুনন্দার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েই সুনন্দা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে এদিন থারুরের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশ পাহোয়া। থারুরের বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে তিনি আদালতে বলেন, এই ধরনের কোনও ই-মেলের কথা তাঁর জানা নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.