Advertisement
Advertisement

Breaking News

সুমিত্রা মহাজন

শংকর লালওয়ানির নেপথ্যে ইন্দোরে ভোটযুদ্ধের রাশ সুমিত্রা মহাজনের হাতে

ইন্দোরের রাজনীতি আবর্তিত সুমিত্রা মহাজনকে ঘিরেই৷

Sumitra Mahajan backs Indoor BJP candidate Shankar Lalwami
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 26, 2019 11:23 am
  • Updated:April 26, 2019 11:23 am  

তরুণকান্তি দাস, ইন্দোর: ভোটযুদ্ধ থেকে আগেই অব্যাহতি চেয়ে নিয়েছেন লোকসভার বিদায়ী স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। কিন্তু ইন্দোরের নির্বাচনী লড়াই আবর্তিত তাঁকে ঘিরেই৷ কীভাবে? তা বুঝতে গিয়ে শহরের আনাচকানাচ একটু ঘুরে বেড়ানো হল৷

এমনিতে দেশের পরিচ্ছন্নতম শহরের স্বীকৃতি পাওয়া ইন্দোরে অন্যতম অভিজাত এলাকা সাকেতনগর। তার মধ্যে আবার মণীশপুরী পৃথকভাবে সেই আভিজাত্য ধরে রেখেছে, যেখানে বাড়ি মানে বাংলো। তার তলায় সবার কম করে খান দুয়েক গাড়ি। প্রোমোটারের আগ্রাসনকে ‘তফাত যাও’ বলা এই তল্লাটের যে পার্কে সবাই সকালে এসে ঘাম ঝরান, তার ঠিক কোণার বাংলোর গেটের গায়ে পদ্ম-পতাকা উড়ন্ত। তিনটে গাড়ি, দুটো বাইক, একটা সাইকেল রাখার পরও নিচের অংশে যে জায়গাটুকু বেঁচে তার মধ্যে দুটো ঘর আলাদা করা। যার প্রথম খোপে বসেন ছোট ‘তাই’। তাঁকে টপকে গেলেই ধরা যায় লোকসভার সদ্য প্রাক্তন স্পিকারকে। বড় তাই।

Advertisement

[ আরও পড়ুন : সাসপেনশন স্থগিত, স্বস্তি পেলেন মোদির কপ্টারে তল্লাশি চালানো আইএএস অফিসার]

 বাড়ির গায়ে নেমপ্লেটে লেখা সুমিত্রা মহাজন। ব্যস। নামই যথেষ্ট। অথবা বাড়তি বিনয় বড় তাইয়ের৷ মহাজনের সচিব বলেছিলেন, সকাল ৯টা নাগাদ পৌঁছে যেতে। তার এক ঘণ্টা আগে গিয়ে এই পাড়ার তো বটেই, শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাড়ির কোণে বসে মাছি তাড়ানোর চেয়ে বাড়তি কোনও কাজ নেই এমন কনস্টেবলেরও দেখা পাওয়া গেল৷ মুহূর্তের জন্য মনে হল, যাঁকে দল ছেঁটে ফেলেছে, তাঁর কাছে এসে সময় নষ্ট এবং ত্বক পোড়ানো গরমে বাড়তি কষ্ট। কারণ, বঙ্গ রাজনীতিতে নেতা,নেত্রীর বাড়ির সামনে সকালের ছবিটা গুরুত্বপূর্ণ। নানা কৃপাপ্রার্থী হাজির হন সাতসকালেই৷

সেই দৃশ্যের সঙ্গে এটা না মিললেও, দৃশ্যপট পরির্তন হতে দেরি হল না৷ দামি গাড়ি, অনামী কর্মী, পাবলিক-হর্ন বাজছে, ঠেলাঠেলি। ঠিক বলেছিলেন ইন্দোরে তাই। সকাল ৯টা। বদলে গেল সময়। ছবিও। পাড়ার বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা যেমনটা হয়ে থাকেন, তিনি অনেকটা সেইরকম। এত চাপ, ভিড় সামলে মিটিমিটি হাসি, পিটপিট চাউনি এবং আলতো করে ঘাড় নাড়া। লোকসভার অধিবেশনে যে ছবি ফুটে ওঠে তাঁর, বাড়িতে যেন তারই রেপ্লিকা। ষড়রিপুর  কোনওটাই আপাতত দেখা যাচ্ছে না তাঁর প্রতিক্রিয়ায়৷ তিনি শুধু শুনেই যাচ্ছেন এবং এক ঘণ্টার মধ্যে উঠে পড়লেন গাড়িতে। সোজা দলাইপুর। সেখান থেকে গৌতমপুরা, বেটমা হয়ে যখন বাড়ি ফিরলেন তখন সন্ধ্যা।

[আরও পড়ুন : এক শিশুর হৃদযন্ত্রে বাঁচল আরেক খুদে, ব্যতিক্রমী সাফল্য চেন্নাইয়ের হাসপাতালের]

তাঁর সঙ্গী শংকর লালওয়ানি। এবারে ইন্দোরের বিজেপি প্রার্থী৷ যিনি বোঝাচ্ছিলেন, “ইন্দোর শহরের এই বদলে যাওয়া সুমিত্রা মহাজনের সৌজন্যে। তিনি তো এখানকার কাউন্সিলর হয়ে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছিলেন। এবং টানা আটবার সাংসদ। ইতিহাস। তাঁর বয়স ৭৫ পার হয়েছে শুনেই দলকে এত ভাবতে হয়েছে এবং তিনি দলকে চিঠি লিখে ভোটে লড়বেন না জানিয়ে যে সৌজন্য ও আত্মসম্মানবোধের পরিচয় দিয়েছেন, তা একমাত্র আদতে মারাঠি সুমিত্রা দেবীকেই মানায়। যিনি মুম্বই থেকে এসে উঠেছিলেন মধ্যপ্রদেশের শিল্প—রাজধানী ইন্দোরের নন্দলালপুরা চৌরাহার তিনতলা বাড়িতে। যেখানে এখনও মাঝেমধ্যে পুরনো অফিসে বসেন তিনি।” এবং এদিনও তিনটে সভা করে মণীশপুরীতে ফিরে সামান্য ফ্রেশ হয়েই চললেন নন্দলালপুরা চৌরাহায়। সঙ্গে সেই শংকর লালওয়ানি।

ইন্দোরে বাঙালি প্রচুর। আরও এক সম্পর্ক আছে বাংলার সঙ্গে৷ বাংলার বিজেপির সদর দপ্তর মুরলীধর সেন লেনের রিমোট কন্ট্রোল এই ইন্দোরের হাতে। এখানকার নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় যিনি সর্বজনীন ‘ভাই’, আপাতত মধ্যপ্রদেশ রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। বঙ্গজয়ের স্বপ্নে বিভোর কৈলাসের ছেলে অবশ্য বিধায়ক। তবে অপ্রিয় সত্যি হল, ইন্দোর বিজেপি কার্যালয় বা লোকসভার প্রচার, সেই যুবনেতা—বিধায়ক আকাশ যেন মেঘে ঢাকা তারা। নিজের এলাকায় প্রচারসভা ছাড়া তিনি কোথাও নেই। যাঁকে ফোনে ধরলে বলেন, “এই আসন এবারও বিজেপির। ইন্দোর পদ্মের।” তাঁ দাবি মিথ্যা নয়। এখানকার মেয়র, বিধায়ক,মন্ত্রী কৈলাসের পুত্র রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের সুনামিতেও গড় ধরে রেখেছেন। কিন্তু এবার? ‘তাই’ যে নেই! ইন্দোরের মুখভার।

[আরও পড়ুন : ‘বিজেপি যাত্রার চরিত্রের মতো দু’মুখো’, শ্লেষের সুর প্রাক্তন শরিক উপেন্দ্র কুশওয়ার]

কংগ্রেস অফিসের ভিড় এবং ‘তাই’—এর বাড়ির ভিড়ের তুল্যমূল্য বিচার করতে করতে এখানকার ধর্মতলা রাজওয়াড়া হয়ে ফের ঢুকে পড়ি মণীশপুরায়। সেখানে চা খেতে খেতে মহাজন বলেন, “প্রার্থী কে হলেন তা নিয়ে না ভেবে দলের কথা ভাবতে হবে। সেই জন্য আমি সব জায়গায় শংকরকে নিয়ে যাচ্ছি।” হাতজোড় করে বসে রয়েছেন শংকর লালওয়ানি, বিজেপি প্রার্থী৷ আপাতত মহাজ্ঞানী-মহাজনের পথ ধরেই হাঁটার চেষ্টা করছেন। শংকর প্রার্থী হলেও, বকলমে লড়ছেন গত আটবারের সাংসদ। সুমিত্রা মহাজন। সন্ধ্যায় যখন এই বাংলোর গিজগিজে ভিড় কাটিয়ে বেরোচ্ছি, তখন তার গেটের মুখে উড়ছে পদ্ম পতাকা। আবার দেখলাম নেমপ্লেট। নাহ, শুধু মহাজন তিনি। সুমিত্রা মহাজন। আর কিছু লেখা নেই। কিন্তু ইন্দোরের দেওয়াল লিখন স্পষ্ট। এখানে মহাজন একজনই। একমাত্রও বটে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement