সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘বাবরি তো ঝাকি হ্যায়, মথুরা কাশী বাকি হ্যায়।’ নয়ের দশকে করসেবকদের এই হুঙ্কার ভোলার নয়। তারপর কেটে গিয়েছে আড়াই দশকেরও বেশি সময়। যথারীতি ‘করেঙ্গে-মরেঙ্গে’ তর্জনের পর কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের ‘অতি আগ্রাসী’ গোষ্ঠী। ধর্মীয় উন্মাদনার আগুন ধিকিধিকি জ্বললেও, তা লেলিহান শিখায় পরিণত হয়নি। রাম মন্দিরের ভিত স্থাপন হওয়ায় এবার স্বাভাবিকভাবেই ফের বাড়ছে উত্তেজনা। আশঙ্কা সত্যি করে এবার প্রভু শ্রীকৃষ্ণের ‘জন্মস্থান’ উদ্ধার করতে মথুরা আদালতে দায়ের হল মামলা।
জানা গিয়েছে, মথুরার দেওয়ানি আদালতে এবার শিশু কৃষ্ণ বা শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমনের হয়ে মথুরার কৃষ্ণ মন্দির চত্বর থেকে শাহী দরগা সরানোর দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন উত্তরপ্রদেশে বাসিন্দা রঞ্জন অগ্নিহোত্রি। মামলায় মন্দির চত্বরের থাকা দরগার ১৩.৩৭ একর জমি খালি করানোর দাবি করা হয়েছে। মমলকারীর অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও শাহী দরগার ম্যানেজমেন্ট ট্রাস্ট স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম বাসিন্দার মদতে অবৈধভাবে ওই জমি দখল করে রেখেছে। শধু তাই নয়, নিজের অভিযোগে মামলাকারী রঞ্জন অগ্নিহোত্রি অভিযোগ করেছেন, শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানের উপরই মুসলিম ধর্মস্থলটি রয়েছে। মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান সেবা সংস্থান জমি হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশে শাহী দরগা ট্রাস্টের সঙ্গে অবৈধভাবে সমঝোতা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নয়া মামলায় আইনি জটিলতার পাশাপাশি ফের ধর্মীয় উন্মাদনা জাগিয়ে তোলার মতো রসদ রয়েছে। ১৯৯১ সালের ‘Places of Worship (Special Provisions Act)’-এর মতে অযোধ্যা ছাড়া স্বাধীনতার সময় অস্তিত্ব থাকা কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো বদলানো যাবে না। ফলে রঞ্জন অগ্নিহোত্রির মামলা ধোপে টিকবে না। কিন্তু ‘প্রভাবশালী’ হিন্দু সংগঠনগুলির চাপের বিষয়টিও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, আধ্যাত্মিক শহর মথুরাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির। হিন্দুদের বিশ্বাস, ওই জায়গাটি শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান। সেই মন্দির চত্বরেই রয়েছে শাহি ঈদগাহ মসজিদ। ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, প্রাচীন কেশবনাথ মন্দির ভেঙেই মসজিদটি তৈরি করেন ঔরঙ্গজেব। ১৯৩৫ সালে ওই মন্দির চত্বরের মালিকানা মথুরার রাজার হাতে সঁপে দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট। পর্যায়ক্রমে সেই সত্ব বর্তায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ঘনিষ্ঠ শ্রী কৃষ্ণভূমি ট্রাস্টের হাতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় সংঘাত। অবশেষে ১৯৬৮ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে জমির মালিকানা হিন্দুদের হাতে থাকলেও মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকার পায় মুসলিম পক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.