সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “চল কোদাল চালাই ভুলে মানের বালাই।” ব্রতচারীর প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্তের এই বাণী থেকে বহু দূরে ভেসে গিয়েছে ভোগবাদী সভ্যতা। ‘মান’ এখন জানের চেয়েও বড়। কোদাল কোপানো ‘ছোটলোকে’র কাজ! এত কথা উঠছে ল্যানসেট গ্লোবাল হেল্থ জার্নালের চাঞ্চল্যকর সমীক্ষা প্রকাশ্যে আসায়। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের প্রাপ্তবয়স্কদের নাগরিকদের অর্ধেক ‘আনফিট’ অর্থাৎ শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নন। ল্যানসেটের আরও দাবি, ভারতের অধিকাংশ মহিলা কায়িক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকেন। এর ফলে তাঁদের শারীরিক অক্ষমতা ক্রমশ বাড়ছে।
২০২২ সাল অবধি সমীক্ষা চালিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ল্যানসেট। সেখানে বলা হয়েছে, পুরুষ নারী নির্বিশেষে ভারতের ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক শারীরিকভাবে ‘অক্ষম’। অন্যদিকে ৫৭ শতাংশ ভারতীয় মহিলা প্রয়োজন অনুযায়ী শারীরিক পরিশ্রম করেন না। ‘অলসতায়’ সামান্য ভালো ফল করেছেন পুরুষরা (৪২ শতাংশ)। অর্থাৎ কায়িক পরিশ্রমের নিরিখে ১৪ শতাংশ এগিয়ে ভারতীয় পুরুষরা। ‘অলস’ তালিকায় গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরেই রয়েছে ভারত। এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও সহমত।
মেশিন নিয়ন্ত্রিত শহুরু সভ্যতার শিকার শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বই। পৃথিবীর প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (৩১.৩) প্রয়োজন অনুযায়ী কায়িক পরিশ্রম করেন না। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি পরিশ্রম করলে শরীর সুস্থ থাকে। অন্যদিকে এক সপ্তাহ কমপক্ষে ৭৫ মিনিট তীব্র শারীরিক পরিশ্রম জরুরি। কোনও পথেই পা বাড়ান না গোটা বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ আর্বান মানুষ। রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের তুলনায় পরিশ্রম করার প্রবণতা ৫ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। ল্যানসেটের সমীক্ষা (২০০০-২০২২) বলছে, বিশ্বের ১৯৭টি দেশ এমন অসলতায় ভুগছে। ৬০ বছর কিংবা তার বেশি বয়সিরাও প্রয়োজন অনুযায়ী শারীরিক পরিশ্রম না করায় একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, কায়িক পরিশ্রম না করার ফলে অসুখের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। বিশেষত এর ফলে হৃদযন্ত্রের অসুখে, ডায়বেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন কোটি কোটি মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও দাবি, কায়িক পরিশ্রম না করা, মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় ‘মহামারী’। এর থেকে মুক্তি দিতে পারে বিনামূল্যের ওষুধ—শারীরিক পরিশ্রম। বহুকাল আগে যে বার্তা দিয়েছিলেন ব্রতচারীর প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্ত—“চল কোদাল চালাই ভুলে মানের বালাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.