সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গরমের ছুটি শেষের দিকে। খুলতে চলেছে বালেশ্বরের (Baleswar) বাহানাগা বাজার হাই স্কুল। আর পাঁচটা দিনের মতোই শুরু হবে পঠনপাঠন। কিন্তু সবকিছু তো আগের মতো নেই। আগের মতো স্কুলে আসতে চাইছে না খুদে পড়ুয়ারা। কোনও এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করছে তাদের। অভিভাবকরাও যেন প্রাণে ধরে নিজেদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে সাহস করছেন না। শেষে বাধ্য হয়ে স্কুলের পুরনো বিল্ডিং ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেখানে নতুন বিল্ডিং গড়া হবে।
আসলে মাঝখানের কয়েকটা দিনে অনেককিছু বদলে গিয়েছে। করমণ্ডলের ভয়াবহ (Coromandel express) দুর্ঘটনার পর এই বাহানাগা হাই স্কুলের একটি ঘরেই রাখা হয়েছিল উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলি। ট্রেন সংঘর্ষে অগুনতি মৃতদেহ পড়ে ছিল লাইন জুড়ে, বগিতে। সেগুলো এনে রাখার জায়গা তো চায়। প্রাথমিকভাবে তাই বাহানাগার এই স্কুলটিকে বেছে নেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। ট্রেনের ধাক্কায় বিকৃত দেহগুলোকে এনে রাখা হয়েছিল শ্রেণিকক্ষে। ধীরে ধীরে মৃতদেহ শনাক্ত করার পর পরিবার-পরিজনদের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়েছে।
লাশের সে রক্তের দাগ শুকিয়ে জমে গিয়েছিল স্কুলের মেঝে জুড়ে। মৃতদেহের দুর্গন্ধও একটা সময় গ্রাস করেছিল গোটা স্কুলকে। সেসব এখন আর নেই। দিনরাত কাজ করে স্কুলটিকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে দিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু আতঙ্ক, সে তো এত সহজে যাওয়ার নয়। স্কুলে দুর্ঘটনায় নিহতদের দেহ রাখা হচ্ছে, এমন কথা কানে আসার পরেই প্রমাদ গুনেছিলেন অভিভাবকরা। এরপর পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠানোর মতো ভরসা পাচ্ছিলেন না তাঁরা। শিক্ষকরা আশ্বস্ত করছেন, যে শ্রেণিকক্ষে মৃতদেহ রাখা হয়েছিল, স্কুল খোলার পর পর তার কোনও চিহ্নই থাকবে না। কিন্তু তাতেও আতঙ্ক কাটছে না পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের মধ্যে। অনেকেই আর আগের মতো স্কুলে আসতে চাইছে না। তাঁরা চাইছেন পুরনো ওই স্কুলবাড়ি ভেঙে ফেলা হোক।
বাহানাগা বাজার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রমিলা সোয়াইন বলছিলেন, খুদে পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে। আমরা স্কুলে পুজো-অর্চনা করার পরিকল্পনা করেছি, তাতে যদি ভয় কাটানো যায়। তবে বালেশ্বরের জেলাশাসক দত্তাত্রেয় ভাউসাহেব শিণ্ডে জানিয়েছেন, “স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি এবং স্থানীয়রা স্কুলের ওই পুরনো বিল্ডিং ভেঙে ফেলে নতুন করে বিল্ডিং তৈরি করাতে চাইছেন। যাতে পড়ুয়াদের মধ্যে কোনওরকম ভয় না থাকে।” শোনা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসন সেই দাবি মেনে নিয়ে পুরনো বিল্ডিং ভেঙে নতুন বিল্ডিং তৈরির ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছে। এমনিতেও স্কুলবাড়িটি পুরনো ছিল, বন্যার সময় মানুষ ওখানে আশ্রয় নেয়। তাই ওটাকে ভেঙে নতুন করে করার পরিকল্পনা রয়েছে। জানাচ্ছেন জেলার এক আধিকারিক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.