Advertisement
Advertisement

প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবে বিস্তর ফারাক, ৪ বছর পরও প্যাকেজিংই ভরসা মোদি সরকারের?

নতুন ভারত তৈরি হবে ২০২২-এ, বলছেন মোদি।

Statistics shows BJP govt fails to fulfill promises
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 26, 2018 12:33 pm
  • Updated:August 21, 2018 8:46 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মোদি সরকারের চার বছর পূর্ণ হল। বছরখানেকের মধ্যেই পের নির্বাচনী বৈতরণি পেরতে হবে নরেন্দ্র মোদিকে। ইতিমধ্যেই প্রচারের রূপরেখাও তৈরি করে ফেলেছে সরকার। প্রচারপর্বের শুরুতেই নয়া স্লোগান ও একটি তিন মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে৷ সমস্ত মাধ্যমে চলছে কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের বিজ্ঞাপন ও সম্প্রচার৷ কী করে ফের নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিকে কাজে লাগানো যায়, কী করে আরও বেশি মানুষকে সরকারি প্রকল্পের সুবিধাগুলি বোঝানো যায় এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে দলের অভ্যন্তরে। অর্থাৎ, আরও একবার আদ্যপান্ত প্যাকেজিংয়ের পরিকল্পনা শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু এই প্যাকেজিংয়ের আড়ালে বাস্তবটা কী। ২০১৪ সালে দেওয়া পাহাড়প্রমাণ প্রতিশ্রুতির কতটা পূরণ করতে পারলেন নরেন্দ্র মোদি। সরকারের শেষ বছরে ছবিটা যা বলছে তা কিন্তু মোটেই সুখকর নয়।

[টাকা নিয়ে হিন্দুত্বের প্রচার? স্টিং অপারেশনে তোলপাড় খবরের দুনিয়া]

বেকার সমস্যা

Advertisement

ক্ষমতায় আসার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বছরে ২ কোটি যুবককে চাকরি দেবে সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে হু হু করে বাড়ছে বেকার সমস্যা, এমনকি বিরোধীদের দাবি, কর্মসংস্থান তৈরির হারে পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকারের থেকেও পিছিয়ে আছে এনডিএ। সম্প্রতি, একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পকোড়া বেচেও কর্মসংস্থান হয়। মোদির এই মন্তব্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভারতে ব্যবসার অনুকুল পরিবেশ তৈরিতে সরকারের ব্যর্থতায় বেকার সমস্যার জন্য দায়ী, যদিও, সরকারের দাবি মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ যুবক স্বনির্ভর হয়েছে গত চার বছরে।

[নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, ৫ জঙ্গিকে খতম করল সেনা]

মূল্যবৃদ্ধি

নরেন্দ্র মোদির ভোটপ্রচারের মূল এজেন্ডার মধ্যে অন্যতম ছিল ইউপিএ আমলের মূল্যবৃদ্ধি। পেট্রোপণ্য এবং রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের ধরনা কর্মসূচির ছবি আজও ভাইরাল। কিন্তু গত চার বছরে নরেন্দ্র মোদি ছবিটা তো বদলাতে পারেনই নি উলটে আরও অবনতি হয়েছে পরিস্থিতির। পেট্রলের দাম ভেঙে দিয়েছে সর্বকালের সব রেকর্ড, ৭০ ছড়িয়েছে ডিজেলও, রান্নার গ্যাসের দাম ইউপিএ আমলের প্রায় দ্বিগুণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ছবিটাও খুব একটা সুখকর নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মাপকাঠিতে টাকার মূল্যও রেকর্ড তলানিতে ঠেকেছে এই সরকারের আমলেই।

[পনেরো দিনে এক লক্ষ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে চার বছরের খতিয়ান শোনাবে বিজেপি]

কৃষি

কৃষিক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেড়গুণ বৃদ্ধি, স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ লাগু করা, উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণ এই ছিল মোদি সরকারের প্রতিশ্রুতি। চার বছরে ফসল বিমা যোজনা, রেলওয়ের সঙ্গে কিসান মান্ডিগুলির সংযোগস্থাপনের মতো বেশ কিছু প্রকল্প সরকার নিলেও, তাঁর সাফল্য আশানুরূপ হল কোথায়। সর্বশেষ বাজেটে দেড়গুণ সহায়ক মূল্যের কথা উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, কিন্তু তাঁর সাফল্যও এখনও পাননি কৃষকরা, লাগু হয়নি স্বামীনাথন কমিটির অন্য সুপারিশগুলিও। দেশজুড়ে কৃষক আত্মহত্যা জ্বলন্ত সমস্যা, কৃষক আন্দোলন সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে।

[উন্মত্ত জনতার রোষ থেকে একাই মুসলিম যুবককে বাঁচিয়ে হিরো গগনদীপ]

নোট বাতিল-জিএসটি

নোটবাতিল, মোদি সরকারের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, যার জেরে কাজকর্ম ফেলে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে যেতে হয়েছিল গোটা দেশকে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য ছিল কালো টাকা উদ্ধার, সীমান্তে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থসংস্থান বন্ধ করা, আর জাল নোট বন্ধ, পরে অবশ্য নগদহীন অর্থনীতির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন মোদি। কিন্তু নোটবাতিলের পর প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও কোনওটিতেই যে সাফল্য আসেনি তা বলার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয়না। রিজার্ভ ব্যাংকই জানিয়ে দিয়েছে নোট বাতিলের পর ৯৯ শতাংশ টাকাই সিস্টেমে ফিরে এসেছে। অন্যদিকে, সীমান্তে প্রায় প্রতিনিয়তই জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে সেনা জওয়ানদের। জাল নোট উদ্ধারের ঘটনাও ঘটছে আকছার। কার্যত ব্যর্থ হয়েছে নগদহীন অর্থনীতিতে প্রবেশের চেষ্টাও। রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে, বিমুদ্রাকরণের আগে খোলাবাজারে যে পরিমাণ নগদ ছিল বিমু্দ্রাকরণের দেড় বছর পর বাজারে তাঁর ৯৯ শতাংশ নগদ টাকা ফিরে এসেছে, অর্থাৎ নগদহীন লেনদেন প্রায় বন্ধ। জিএসটি লাগু করা হয়েছিল কর প্রক্রিয়ার সরলীকরণের জন্য, অথচ ৫ ভাগে ভাগ করে লাগু হওয়া পণ্য ও পরিষেবা করকে আরও জটিল বলেই মনে করছেন আম জনতার একাংশ। এতে অবশ্য রোজগার বেড়েছে সরকারের।

[আন্দামানে প্রবেশ বর্ষার, সময়ের আগেই আগমনের সম্ভাবনা বাংলায়]

দুর্নীতি   

সম্ভবত দুর্নীতিই সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কংগ্রেস সরকারের পতনের, টু জি, কমনওয়েলথ, কয়লা কেলেঙ্কারির মত হাজারো দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ মনমোহন সরকারকে সেসময় তীব্র শ্লেষে বিঁধতেন মোদি। স্বপ্ন দেখাতেন ২০১৯-এর মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ ভারত গড়ার। অথচ তাঁর সরকারের রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই এখন উঠছে দুর্নীতির অভিযোগ। তাঁর দলের সভাপতির ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে মাত্র ৬ মাসে ৫০ লক্ষ টাকার কোম্পানি থেকে ৮০ কোটি টাকা মুনাফা তোলার। তাঁর দল বিজেপি কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগে জেল খাটা বিএস ইয়েদুরাপ্পাকে। তাঁর আমলেই দেশ হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপিরা অনায়াসে দেশত্যাগ করছেন।  নীরব মোদি, মেহুল চোখসি, বিজয় মালিয়া, ললিত মোদিদের দেশে ফেরাতে পুরোপুরি ব্যর্থ সরকার। অথচ হাজারো অভিযোগের মধ্যে দুর্নীতি ইস্যুতে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব মোদি।

[OMG! সাতসকালে বাড়িতে এক কাপ গরম চা নিয়ে হাজির হবে ড্রোন!]

এসব ছাড়াও লোকপাল বিল, সাম্প্রদায়িক হিংসা, দলিত হিংসা, গো-রক্ষকের তাণ্ডব, দারিদ্র দুরীকরণের মতো ইস্যুগুলিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ সরকার। ক্ষুধার সূচকে আজ সেঞ্চুরি পেরিয়েছে এ দেশ। নাগরিক নিরাপত্তাতেও এ দেশের স্থান তলানিতে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে গোটা বিশ্বে ৮৬ নম্বরে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য এখন বলছেন ২০২২-এর কথা। ৪ বছর আগে স্বপ্নের ফেরিওয়ালার মতো যে নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তা পূরণ হবে ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বলছেন মোদি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement