Advertisement
Advertisement

Breaking News

নোট বদলে রাজস্ব কমবে রাজ্যের, জেটলিকে জানালেন অমিত মিত্র

অমিত মিত্রের বক্তব্যকে সমর্থন তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ ও কেরলের...

States including West Bengal, Uttar Pradesh and Tamil Nadu, raised the issue of demonetization of 500 and 1000 rupee notes and its impact on state treasuries with Union Finance Minister Arun Jaitley
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 21, 2016 9:30 am
  • Updated:August 12, 2021 5:59 pm  

নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে পেয়ে নোট বাতিল সংক্রান্ত রাশি-রাশি ক্ষোভ তাঁর সামনেই উগরে দিলেন পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা৷ জিএসটি নিয়ে আলোচনার জন্য রবিবার দিল্লিতে জেটলির ঘরোয়া বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি৷ কিন্তু রাজ্যগুলির এই স্তরে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশে কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

এদিন বৈঠক শুরুর আগেই জেটলির কাছে বিষয়টি পাড়েন অমিত মিত্র৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে যে প্রভাব শিল্পক্ষেত্রে পড়েছে, তাতে কর আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ এরফলে মন্দা দেখা দেবে৷ প্রভাব পড়বে রাজ্যের কোষাগারে৷ অমিত মিত্রকে সমর্থন করে তামিলনাড়ু বলে, নোট বাতিলের জন্য শিল্পক্ষেত্রে কাজকর্ম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ উত্তরপ্রদেশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কানপুর ও মোরাদাবাদের কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে৷ কেরলের অর্থমন্ত্রী থমাস আইজাক বলেন, বিভিন্ন রাজ্য বেসরকারিভাবে আশঙ্কা করছে, এই নোট বাতিলের কারণে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে৷ তাঁর মতে, যদি ৮৬ শতাংশ টাকা উধাও হয়ে যায়, তা মানুষের পক্ষে সত্যিই সমস্যার৷ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য৷

Advertisement

উল্লেখ্য, কালো টাকা ও দুর্নীতি রোধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পুরনো নোট ব্যাঙ্কে জমা করার নির্দেশ দেন৷ সেই অনুযায়ী, ব্যাঙ্কগুলিতে কোনও ঊর্ধ্বসীমা ছাড়াই পুরনো টাকার নোট জমা হচ্ছে৷ কিন্তু নগদ পুরনো নোট বদল ও ব্যাঙ্ক থেকে নগদ তোলার ক্ষেত্রে সরকার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে৷ সে কারণে বাজারে অর্থসংকট দেখা দিয়েছে৷ বাজারে ছড়িয়ে থাকা মোট অর্থের ৮৬ শতাংশ বা ১৪ লক্ষ কোটি টাকা রয়েছে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে৷ নোট বাতিল সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরই সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে বিষয়টিতে প্রতিবাদ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারেরও দাবি জানান৷ তাঁকে সমর্থন জানান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দবি জানিয়েছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও৷

এদিকে, জিএসটি নিয়ে আলোচনায় বাৎসরিক দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভার এমন ব্যবসায় কর আদায়ের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে এখনও কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ মিটল না৷ আর তার জেরেই আটকে রইল পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত৷ বছরে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসার ক্ষেত্রে কর আদায়ের অধিকার শুধুমাত্র রাজ্যের হাতেই রাখতে হবে বলে প্রথম থেকে অনড় অবস্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ রবিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ডাকা ঘরোয়া বৈঠকে সেই অবস্থানও থেকে একচুল সরলেন না রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই সব সিদ্ধান্ত আটকে ছিল৷ আর তা দেখেই জেটলি অমিত মিত্র-সহ কয়েকটি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে ঘরোয়া বৈঠকে ডাকেন৷ আগামী শুক্রবার কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে রয়েছে৷ তার আগেই ঘরোয়াভাবে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চাইছিলেন জেটলি৷ এদিনের বৈঠক যে ফলপ্রসূ হয়নি সেকথা জেটলির কথাতেই স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে৷ বৈঠকের পরে জেটলি জানান, “আজকের বৈঠক অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে৷ ২৫ নভেম্বরের বৈঠকে আবার আলোচনা হবে৷”

জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকেও অমিতবাবু প্রথম থেকেই সুর চড়া করেন৷ কর আদায়ের অধিকারের বিষয়ে সবক্ষেত্রেই কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ অধিকার থাকলে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আঘাত হানারই শামিল বলে তিনি বৈঠকে অভিযোগ করেছেন৷ একইসঙ্গে রাজস্বের ক্ষেত্রে কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও পক্ষেরই যাতে লোকসান না হয়, তার ভারসাম্য রক্ষার জন্যও তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷ এমনিতেই কুড়ি লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাৎসরিক টার্নওভার রয়েছে এমন ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনও কর নেই৷ তারপর থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভার রয়েছে এমন ব্যবসার পরিমাণও অপেক্ষাকৃত কম৷ তাই এদের কর আদায়ের ভার রাজ্যের হাতে থাকলে তাতে কেন্দ্রের খুব একটা অসুবিধা হবে না বলেই তিনি দাবি করেছেন৷ কারণ, পণ্য হোক বা পরিষেবা, এই দুই ক্ষেত্রেই দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত যে ব্যবসা রয়েছে তার পরিমাণ যথাক্রমে ১৭ শতাংশ ও প্রায় ৯ শতাংশ৷ অর্থাত্‍ পণ্যের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশেরও বেশি ও পরিষেবার ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশেরও বেশি ব্যবসার ক্ষেত্রে কর আদায়ের দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের হাতেই থাকবে৷ তাই সামান্য অংশটুকু শুধু রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিলে কেন্দ্রর আর্থিক ক্ষতি হবে না বলেই যুক্তি দিয়েছেন অমিতবাবু৷

শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, তামিলনাডু, কেরলের মতো রাজ্যগুলিও ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে কর আদায়ের অধিকার শুধু রাজ্যের হাতেই থাকুক বলে দাবি করেছে৷ পণ্য হোক বা পরিষেবা, উভয় ক্ষেত্রেই দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত বাৎসরিক টার্নওভার রয়েছে এমন ব্যবসার কর আদায়ের অধিকার শুধুমাত্র রাজ্যের হাতেই রাখতে হবে দাবি তুলে এই সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জেটলির সামনেও সরব হয়েছেন৷ এ প্রসঙ্গে তাঁদের যুক্তি, রাজ্যের হাতে তৃণমূলস্তর পর্যন্ত ব্যবসার কর আদায়ের পরিকাঠামো রয়েছে এবং ছোট ব্যবসায়ীরা রাজ্যের সঙ্গেই এবিষয়ে সাবলীল৷

তবে এখনই বিষয়টি নিয়ে হাল ছাড়তে রাজি নন জেটলিও৷ রাজনৈতিক স্তরে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভবপর হয়নি, প্রশাসনিকস্তরে আলোচনার মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধানেরও তিনি চেষ্টা করছেন বলেই জানা গিয়েছে৷ সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের আধিকারিকরা এই সমস্ত রাজ্যের আধিকারিককে সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে সমাধানসূত্র বের করার চেষ্টা করবেন৷ সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই জিএসটি সংক্রান্ত সবক’টি বিল পাস করাতে চায় সরকার৷ তাই তড়িঘড়ি সকলকে একমত করতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement