ফাইল ছবি
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনে সাড়া। পড়ুয়াদের কথা ভেবে বড় সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের। দাগি হিসেবে চিহ্নিত নন, এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে শর্তসাপেক্ষে নরম হল শীর্ষ আদালত। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে ফিরতে পারলেও অশিক্ষক কর্মীরা স্কুলে যোগ দিতে পারবেন না।
একযোগে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিলে ভেঙে পড়তে পারে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা। তাই সুপ্রিম রায়ে অন্তর্বর্তীকালীন পরিবর্তন চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সেই আবেদনের শুনানিতে এদিন কিছুটা হলেও নরম হল সুপ্রিম কোর্ট। তবে দু’টি শর্ত আরোপ করেছেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। এক, ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে যে তারা চলতি বছরেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবেন। দুই, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে না পারলে কড়া ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, গত শুনানিতে ‘সুপ্রিম’ নির্দেশ ছিল তিনমাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। বৃহস্পতিবারের রায়ে সেই সময়সীমা বাড়ানো হল।
প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের কথা ভেবে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হল। ১ মে থেকে কাজে যোগ দিতে পারবেন তাঁরা। ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফেরালেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের জন্য পুরনো নির্দেশই বহাল থাকল। কারণ তাদের নিয়োগে এত বিশাল দুর্নীতি হয়েছে যে তাদের কাজে ফেরালে ভুল বার্তা যাবে বলে মত প্রধান বিচারপতির। দাগি নয় এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে ফেরানো হলেও নয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁদের জন্য কোনও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে না। পরীক্ষা দিয়ে নতুন করে যোগ্যতা প্রমাণ করে নিযুক্ত হতে হবে তাঁদের।
সুপ্রিম কোর্টের কলমের খোঁচায় একসঙ্গে বাতিল হয়েছে এসএসসির ২৫,৭৫২ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি। এই রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল পর্ষদ। সেখানে রাজ্যের অন্তত ১৭টি স্কুলের বেহাল দশার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। সুপ্রিম নির্দেশে কোনও স্কুলের ৮ জন শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়ে বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১। কোথাও ২৭ জনের মধ্যে চাকরি খুইয়েছেন ২৫ জন। কোথাও ছ’ জনের মধ্যে আছেন মাত্র তিনজন। কোনও স্কুলে আবার ঘণ্টা বাজানোর কর্মী না থাকায় সেই কাজ করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীর অভাবে সংকটে ভুগছে বিভিন্ন স্কুল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের খাতা দেখা থেকে শুরু করে নতুন শিক্ষাবর্ষের পঠন পাঠনে দেখা দিয়েছে প্রচুর সমস্যা। এই ধরনের নানা ঘটনার উল্লেখ রয়েছে আবেদনে। এই পরিস্থিতিতে বড় নির্দেশ দিল সর্বোচ্চ আদালত।
এদের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীকে ‘দাগি’ বলে জানিয়ে দিয়েছিল এসএসসি। সিবিআই তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে কারচুপির প্রমাণ মিলেছিল। এই ছ’হাজার ‘অযোগ্য’ শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী কাজে ফিরতে পারবেন না। সুপ্রিম নির্দেশে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা কাজে ফিরলেও বহু প্রশ্নের জবাব অধরাই রইল। শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে ফেরার অনুমতি দেননি প্রধান বিচারপতি। ফলে স্কুলের দপ্তরীদের কাজ, মিড ডে মিলের কাজকর্ম কে করবেন, তা নিয়ে ধন্ধ রয়েই গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.