কেরলে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে বক্তব্য রাখছেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি।
বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: যে কথা এতদিন ধরে বোঝাতে চেয়েও হয়ত ঠিকমতো বাস্তব পরিস্থিতি বুঝিয়ে উঠতে পারেননি পক্ককেশের কমরেডকুল, সেকথাই শানিত যুক্তি আর ধারালো বাক্য দিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটের ভাষণে স্পষ্ট ছবি এঁকে দিলেন তরতাজা এক ছেলে। কেরলে সিপিএমের (CPM) ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে বাংলার তরুণের বক্তব্য শুনে তাঁকে প্রশংসায় না ভরিয়ে পারলেন না বয়স্ক কমরেডরাও। অভিজ্ঞতা ভরপুর পার্টি কংগ্রেসে যিনি তারুণ্য দিয়ে মাত করলেন, তিনি আর কেউ নন। বাংলার এসএফআই সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য (Srijan Bhattacharya)। বৃহস্পতিবার তিনি তৃণমূলের সন্ত্রাস, রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল ও বিজেপিকে এক বন্ধনীতে রেখে রাজ্যের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। বলা হচ্ছে, এবারের পার্টি কংগ্রেসের আবিষ্কার সিপিএমের এই তরুণ নেতা।
তৃণমূল (TMC) শাসিত পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অবস্থা ঠিক কী? কেমন আছেন রাজ্যবাসী? কোনটা ভাল, কোনটাই বা মন্দ? কীসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা প্রয়োজন? এসব নানা প্রশ্নের জবাব এতদিন ঠান্ডা ঘরে বসেই পাওয়ার চেষ্টা করেছেন বামফ্রন্ট শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কেবলই তাত্ত্বিক নেতাদের ডাক পড়ে। তাঁরা কাগজকলম নিয়ে নিজেদের কষা অঙ্কের উত্তরের খোঁজ করেন নিজেরাই। মাঠে নেমে কাজ করা নেতারা থাকেন ময়দানেই। গোলটেবিল বৈঠকে তাঁদের তেমন একটা কদর নেই। কিন্তু এবার ছবিটা খানিক ভিন্ন। সিপিএম রাজ্যকমিটি থেকে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞ, বর্ষীয়ান নেতারা বিদায় নিয়ে এগিয়ে দিয়েছেন তরুণদের। একঝাঁক নতুন মুখ এসেছে সিপিএম সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে। আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই পার্টির নেতৃত্বের নজরে এসেছেন ছাত্রনেতা সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধর, যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা।
এবার পার্টি কংগ্রেসের মতো বড় মঞ্চেও তাঁদের এগিয়ে দেওয়ার মতো ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেল ইয়েচুরি-বিজয়নদের। কেরলের ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসে বঙ্গ সিপিএমের প্রথম বক্তা হিসেবে মঞ্চ ছেড়ে দেওয়া হল সৃজন ভট্টাচার্যকে। তাঁর বক্তব্য খুব নির্দিষ্ট ছিল। রাজ্যের তৃণমূলের সন্ত্রাসের চিত্র স্পষ্ট করা। যুক্তি তুলে ধরে বোঝানো, এসবের নেপথ্যেই রয়েছে সংঘের (RSS) কলকাঠি। আর এখানেই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে যে ফারাক নেই, তা বোঝালেন সৃজন। এমন সর্বনাশা পরিস্থিতি রুখতে হলে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষতাকে আরও সংঘবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক। আর তাতেই মনজয় করলেন। সৃজনের কাছে ব্যাপারটা অনেটাই – ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’-এর সমতুল্য।
বাংলার এই তরুণ নেতার কথা এখন মালয়ালি রাজ্যের লালপার্টির সদস্যদের মুখে মুখে ফিরছে। এমন কাউকেই তো দরকার ছিল এতদিন। তবে এই পার্টি কংগ্রেসে আর কি সুযোগ পাবেন লাল ব্রিগেডের তরুণরা? সেই প্রশ্নে কিন্তু বঙ্গ সিপিএমের অন্দরে বেশ টানাপোড়েন। আজ থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের সাংগঠনিক আলোচনা। তাতে বাংলার জন্য বরাদ্দ ২৩ মিনিট। বক্তা কলকাতার (Kolkata) জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার ও মহিলা নেত্রী কণীনিকা ঘোষ বোস। কেন সাংগঠনিক স্তরের আলোচনায় জেলার ময়দানে নামা নেতানেত্রীদের এগিয়ে দেওয়া হল না? কেন কল্লোল মজুমদারের মতো তাত্ত্বিক নেতাদের বাছা হল? এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝে বদল হতেও পারে বক্তাতালিকা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.