সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারিকে কেন্দ্র করে উত্তাল বাংলাদেশ। এই ইস্যুতে এবার ইউনুস প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হলেন ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশংকর। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়ার আবেদনের পাশাপাশি সেখানকার কট্টরপন্থীদের নিয়ন্ত্রণের বার্তা দিলেন তিনি।
চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারির তীব্র বিরোধিতা করে এদিন শ্রী শ্রী রবিশংকর বলেন, ”একজন নিরস্ত্র আধ্যাত্মিক নেতাকে গ্রেফতার করা বাংলাদেশের নেতৃত্বের জন্য একেবারেই অনুচিত, যিনি শুধুমাত্র সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের কথা শোনার এবং তাদের উপর চলা অত্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একজন ধর্মীয় পুরোহিতকে গ্রেফতার করা বাংলাদেশ বা তার ভাবমূর্তির জন্য কোনোভাবেই ইতিবাচক হতে পারে না। বাংলাদেশ, যা একসময় উদার এবং প্রগতিশীল দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, তার কাছে আমরা এর চেয়ে অনেক বেশি আশা করি। আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসের কাছ থেকে আশা করি যে তিনি দেশবাসীর মধ্যে শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করবেন। আমরা তার কাছ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ আশা করি না যা সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও বিভাজন ও ভয়ের সৃষ্টি করে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করা প্রয়োজন এবং উগ্রপন্থা দমন করা আবশ্যক, যা দেশকে শতাব্দী ধরে পিছিয়ে দিচ্ছে।”
একইসঙ্গে সকলকে এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হওয়ার আবেদন জানিয়ে শ্রী শ্রী রবিশংকর বলেন, ” আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই, এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানাতে এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে।”
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে বার্তা দিয়েছেন সদগুরুও। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, “একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ধর্মতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী হওয়ার জন্য ভেঙে পড়ছে। এটা খুবই লজ্জাজনক। মুক্ত গণতন্ত্রের মূল্য অনুধাবন করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। ধর্মের ভিত্তিতে নিপীড়ন বা জনসংখ্যার দুর্বল শ্রেণির ওপর হামলা কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের প্রতিবেশী গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে গিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হওয়া উচিত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। যেখানে সকল নাগরিকের নিরাপদে সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার থাকবে।”
উল্লেখ্য, হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনে সংখ্যালঘু নির্যাতন লাগামছাড়া আকার নিয়েছে বাংলাদেশে। এই ঘটনায় রাষ্ট্রসংঘের প্রশ্নের মুখে পড়েছে ইউনুস সরকার। তবে পরিস্থিতি শোধরাতে কোনও উদ্যোগ তো দূর, রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনে এবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু মুখ সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হলে তাঁর পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই ঘটনায় মঙ্গলবার উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। চিন্ময় প্রভুকে প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি আটকে চলতে থাকে বিক্ষোভ। হিন্দুদের বিক্ষোভ থামাতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। উত্তাল এই পরিস্থিতিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এই মৃত্যুকে হাতিয়ার করেই হিন্দু সংগঠনের বিরুদ্ধে পালটা পদক্ষেপ শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রামে আদালতের সামনে বিক্ষোভ ও আইনজীবী হত্যার অভিযোগে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বলেই জনা যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.