সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অমরনাথ যাত্রীদের উপর জঙ্গি হামলার মতো দুঃখজনক খবর দিয়ে শুরু হয়েছিল সপ্তাহটা। কাশ্মীরে অমরনাথ যাত্রীদের বাসে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু হয় আট পুণ্যার্থীর। তীর্থযাত্রীদের বাসটি শ্রীনগর থেকে অমরনাথের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। ফেরার পথে অনন্তনাগের মীরবাজারের কাছে জঙ্গিদের নিশানা হয় বাসটি। বারবার নিশানায় অমরনাথগামী তীর্থযাত্রীরা। ১৯৯৩ থেকে শুরু। ২০১৭-তেও রক্তের স্রোত। নিরস্ত্র পূণ্যার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রশাসনের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দেওয়াই জঙ্গিদের লক্ষ্য। কারও মতে, দুই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অশান্তি পাকিয়ে দেওয়া এর উদ্দেশ্য। যে উদ্দেশ্যসাধনে সোমবার রাতে হামলা। অমরনাথ থেকে বাসে ফিরছিল ৬০-৭০ জনের পূণ্যার্থীদের দলটি। নিরাপত্তার কোনও বালাই ছিল না। সফট টার্গেট পেয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় জঙ্গিরা। তারপর মৃত্যুমিছিল।
[অমরনাথ হামলা নিয়ে চুপ কেন চিন, সওয়াল মেহবুবার]
মানবিকতা যেখানে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, দেশে জাতি-ধর্মের নামে যখন অসহিষ্ণুতার প্রশ্ন ওঠে, তখন দেশের একতার প্রতীক হয়ে ধরা দিলেন সেলিম নামের এক ব্যক্তি। শেখ সেলিম গফুর, যিনি ছিলেন ঐ বাসের চালকের আসনে। সেলিমের সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বলিউডের তারকারা। এবার তাঁর সাহসিকতাকে পুরস্কৃত করলেন সংগীতশিল্পী সোনু নিগম। সেলিমের উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসিকতার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য সেলিম। যে সোনু নিগমকে আজান টুইট বিতর্কে বিদ্ধ করেছিল মৌলবাদীরা, সেই সোনুই জাতি-ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে সেলিমের বাহাদুরির গুণ গাইলেন। অনেকেই তখন সোনুকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় লাউডস্পিকারে তারস্বরে আজান শুনে কেন ঘুমের ক্ষতি করবেন, টুইটারে সওয়াল তুলেছিলেন গায়ক। কিন্তু ধর্মের ধ্বজাধারী এবং কিছু ধর্মনিরপেক্ষতার ধুয়ো তোলা বিদ্বজ্জনরা সোনুর নিন্দা করেছিলেন। সোনুকে সর্ব ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু হওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। শহরের এক মৌলবি তো সোনুর মাথা কামিয়ে গলায় জুতোর মালা ঘোরানোর ফতোয়া জারি করে দেন। বদলে ইনামও ঘোষণা করেন। সে বিতর্কের জল বহুদূর গড়িয়েছিল তখন। কিন্তু তিনি যে আদৌ মৌলবাদকে উসকানি দেন না তা ফের প্রমাণ করলেন সোনু। অকুতোভয় বাসচালক সেলিমকে আর্থিক পুরস্কার দিয়ে।
কিন্তু বাস্তবে কোন সম্মান বা আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয় না সেলিমের মতো সাহসীদের।হয়তো সাত জনের প্রাণ তিনি বাঁচাতে পারেননি কিন্তু তাঁর দৌলতেই বেঁচে গিয়েছেন আরও পঞ্চাশ জন পূণ্যার্থী। নিরাপত্তারক্ষীদের মতে আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। কিন্তু সেই ভয়াবহতার হাত থেকে বাঁচালেন সেলিমই। জঙ্গি হানা হতে দেখেও আতঙ্কে বাস থামিয়ে দেননি তিনি। এমন ভয়ংকর মুহূর্তেও তাঁর বাস চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্তের জন্যই বাঁচে একাধিক প্রাণ। রক্তাক্ত অমরনাথেও এমন সম্প্রীতিই দেশকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে।
[নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের পাক হামলা, শহিদ এক ভারতীয় জওয়ান]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.