সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুম্বইয়ে চোখের সামনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে বাড়ি। ভিটেহারা হয়েছেন বহু মানুষ। সরকারি মতে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে মোট ১৩ জনের। চোখের সামনে পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন অনেকেই। আর সেই ভয়ংকর মুহূর্তের স্মৃতি এখন তাড়া করছে ডোংরিতে ভেঙে পড়া ওই আবাসনের বাসিন্দাদের।
ডোংরির ওই বহুতলের বিপর্যয় জীবনটাই পালটে দিয়েছে বছর আঠাশের আলিমা ইদ্রিশের। একদিকে শারীরিক আঘাত, অন্যদিকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা এখন তার সর্বক্ষণের সঙ্গী। মঙ্গলবার যখন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল ডোংরির পাঁচতলা আবাসনটি, তখন ঘরেই ছিলেন আলিমা। চোখের নিমেষে বহুতল যখন ভেঙে পড়ল, দুই সন্তান শাহজাদ (৭) ও হারবাজকে (৪) নিয়ে চাঙর, পাথর ও লোহার নিচে আটকে পড়েন তিনি। চার ঘণ্টা দুই সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন। তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাদের বাবা এসে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে সকলকে। মায়ের সেই কথাই অনেকটা মনের জোর দিয়েছিল দুই খুদেকে। বেশ কিছুক্ষণ বাবার অপেক্ষাও করে তারা। কিন্তু যতক্ষণে উদ্ধারকারীদের নজর পড়েছে তাদের উপর, ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। নিথর হয়ে গিয়েছে দুই সন্তানের দেহ৷
সংবাদমাধ্যমকে ভয়ংকর মুহূর্তের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। বলেন, “মঙ্গলবার সকালে সাড়ে ১১ টা নাগাদ আমি রান্নাঘরে ছিলাম। তখন হঠাৎ অনুভব করি, বাড়িটা কাঁপছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড়িয়ে সব ভেঙে পড়ল। চোখের সামনে শুধু ধুলো। শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বহুতল ভেঙে পড়ার খবর পেয়েই রশিদ বাড়ি ফিরে আসে। আমাকে ফোন করে কিন্তু, নাহ ফোন তখন আর নেই। এরপর হাসপাতালে পৌঁছে সমস্ত অ্যাম্বুল্যান্সে আমাদের খোঁজ করতে শুরু করে। কিন্তু কোথাও আমাদের হদিশ পায়নি।”
ঘটনার পরের দিন বুধবার বেলা দেড়টা নাগাদ উদ্ধারকারীরা আলিমা ও তাঁর সন্তানদের দেখতে পান। আরও আধঘণ্টা পর উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে যতক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে, ততক্ষণে আলিমাদেবীর সাড় থাকলেও অসাড় হয়ে পড়েছে ২ খুদে। এরপর উদ্ধারকারীরাই টের পান, তাদের দেহে প্রাণ নেই।
আলিমা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী রশিদ মুম্বইয়ে কর্মরত। তাই সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সময় কাটাতেই মুম্বইয়ে এসেছিলেন। খুব শিগগিড়িই তারা উত্তরপ্রদেশে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু সন্তানদের নিয়ে ফেরা আর হল না। এখন আলিমার গলায় শুধুই আক্ষেপ, ‘কেন আসতে রাজি হলাম?’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.