প্রতীকী ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনার (Coronavirus) দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বেসামাল দেশ। একদিকে বাড়তে থাকা সংক্রমণ, অন্যদিকে হাসপাতালে বেড ও অক্সিজেনের ঘাটতি- সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। বহু মানুষই হারাচ্ছেন তাঁদের আপনজনকে। অপ্রত্যাশিত মৃত্যুছোবল কেড়ে নিচ্ছে প্রাণের থেকেও প্রিয় মানুষকে। দৈনন্দিন মৃত্যুর পরিসংখ্যানের আড়ালে রয়েছে এমনই কত হৃদয় মুচড়ে ওঠা আখ্যান। তেমনই এক বিয়োগব্যথায় ভরা মুহূর্ত ধরা পড়ল ইন্টারনেটে। দীপশিখা ঘোষ নামের এক ডাক্তারের টুইটকে ঘিরে উদ্বেল হল নেটদুনিয়া।
কী লিখেছেন ওই চিকিৎসক তাঁর টুইটারে? তিনি জানিয়েছেন, এক করোনা (COVID-19) আক্রান্ত মা ও তাঁর ছেলের চিরবিচ্ছেদের সাক্ষী খাকার করুণ অভিজ্ঞতার কথা। দীপশিখা লিখেছেন, ‘‘আজ আমার শিফটের শেষদিকে এক রোগীর হয়ে তাঁর আত্মীয়কে ভিডিও কল করে দিলাম। কেননা উনি করার মতো অবস্থায় ছিলেন না। আমাদের হাসপাতালে কেউ চাইলে আমরা এরকম সাহায্য করেই থাকি। ওই রোগীর সন্তান আমার সময় থেকে কয়েক মিনিট চেয়েছিলেন। তারপর তিনি তাঁর মরণাপন্ন মা’কে একটি গান গেয়ে শোনান।’’
পরে আরও একটি পোস্টে পরবর্তী অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন দীপশিখা। তিনি লেখেন, ‘‘আমি ফোনটি ধরে দাঁড়িয়েছিলাম। কেবল মা ও ছেলের দিকে তাকিয়েছিলাম। গান চলছিল। বাকি নার্সরা এসে পাশে দাঁড়িয়েছিল নীরব হয়ে। গানের মাঝখানেই ছেলেটি ভেঙে পড়লেও তিনি গান শেষ করলেন। পরে মায়ের শরীরের খবর নিয়ে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দিলেন।’’
এটাই ছিল ওই কোভিড আক্রান্ত মহিলা ও তাঁর ছেলের মধ্যে হওয়া শেষ কথোপকথন। কিশোর কুমারের (Kishore Kumar) সুপারহিট গান ‘তেরা মুঝসে হ্যায় পহেলা কা নাতা কোয়ি’ গেয়েছিলেন ছেলেটি। পরে আরেকটি পোস্টে দীপশিখা জানিয়েছেন, সেই মুহূর্তটি তিনি ও তাঁর সঙ্গী নার্সরা কখনওই ভুলতে পারবেন না। গানটি চলার সময় তাঁদের চোখ জলে ভরে এসেছিল। পরে যে যার কাজে ফিরে গেলেও গানটি যেন থেকেই গেল মনের মধ্যে। দীপশিখা জানাচ্ছেন, ‘‘ওই গানটা আমাদের বদলে দিয়ে গেল। অন্তত আমাকে তো বটেই। এই গানটা ওঁদেরই হয়ে থেকে যাবে আজীবন।’’
এই বিষাদঘন পোস্টগুলি মন আর্দ্র করেছে নেটিজেনদের। ভাইরাল হয়ে গিয়েছে দীপশিখার টুইটগুলি। মৃত্যুকে শিয়রে দাঁড় করিয়ে রেখেও মা ও ছেলের শেষ মুহূর্তের ওই গানের স্মৃতিভরা কাহিনি যেন শোকস্তব্ধ করে দিচ্ছে তাঁদেরও। অনেকেই শেয়ার করছেন। এমন ব্যথাতুর এক আখ্যান ভাগ করে নিচ্ছেন নেটজগতের আরও মানুষের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.