সুব্রত বিশ্বাস: প্লাস্টিকের কাপ অতীত, দেশের সমস্ত রেল স্টেশনে এবার থেকে মাটির ভাঁড়ে চা মিলবে। দু’দিন আগে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এই ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে স্টেশনে (Station) মাটির ভাঁড়ে চা বিক্রি হবে। তাঁর দাবি, ৪০০টি স্টেশনে মাটির ভাঁড়ে চা বিক্রি হচ্ছে। তবে তাঁর এই ঘোষণার পর রীতিমতো বিভ্রান্ত রেলকর্তারা। মাটির ভাঁড় চালু হলে, চায়ের দাম নিশ্চিতভাবেই বাড়বে, এই আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
মাটির ভাঁড়ে চা সুস্বাদু তো বটেই, এমনকী পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করেই ব্যবহৃত ভাঁড় নষ্ট করা যায়। এই তথ্য খানিকটা গ্রহণ যোগ্য হলেও বেশিরভাগটাই সমস্যার বলে মত রেলকর্তাদের একাংশের। এমনকী তা পরিবেশকে দূষিত করে বলেও দাবি তাঁদের। পূর্ব রেলের এক প্রবীণ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের কথায়, ”ভাঁড়ের চা খেতে সুস্বাদু। শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক না হলেও ব্যবহৃত ভাঁড় নষ্ট করা কঠিন। মাটির তৈরি হলেও তা সরাসরি মাটিতে মিশে যায় না। পাশাপাশি, মাটিতে সিলিকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশকে নষ্ট করে।”
২০০৫ সালে লালুপ্রসাদ যাদব রেলমন্ত্রী থাকাকালীন প্লাস্টিককে বিদায় করে মাটির ভাঁড় ফিরিয়ে আনেন। সঙ্গে আলুর চোখা ও লিটি। তা চালু হওয়ার পর রেলযাত্রীরা চায়ের স্বাদ ফিরে পান নতুন করে। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পরিবেশ দপ্তরের আপত্তির পাশাপাশি স্টেশনের ডাস্টবিনগুলিতে উপচে পড়ছিল ব্যবহৃত ভাঁড়। এমনকী চা খেয়ে লাইনে ভাঁড় ফেলার রেওয়াজে পরিবেশ (Environment) নষ্ট হচ্ছিল। এখন প্রতিটি স্টেশনে কাগজের কাপ ব্যবহার হয়, যা মুড়ে ফেলে দিলে তেমন কোনও সমস্যা হয় না। সেখানে ভাঁড় ফেলার জন্য অনেকটা জায়গা লাগে। তা মাটিতে মিশতে দেরি হওয়ায় সমস্যাও চরমে ওঠে। এসবের জেরে বন্ধ হয়ে যায় মাটির ভাঁড়।
চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাওড়া স্টেশনে চায়ের ভেন্ডিং স্টল সামলেছেন সুরেশ সাউ। তিনি স্পষ্ট জানাচ্ছেন, মাটির ভাঁড় ব্যবহার শুরু হলে চায়ের দাম বাড়বে। প্রতিটি কাগজের গ্লাসের দাম পড়ে ৫০ পয়সা। সেখানে মাটির ভাঁড়ের দাম কমপক্ষে দেড় টাকা। ফলে চায়ের দাম বাড়তে বাধ্য। বিক্রেতাদের এই দাবি একেবারে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেছেন রেলকর্তারা। পাশাপাশি সুরেশ সাউ প্রশ্ন তুলেছেন, চা মাটির ভাঁড়ে বিক্রি হলে কফি, দুধ, লস্যি কীসের ভাঁড়ে বিক্রি হবে? এমনই মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মাঝে রেলমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর করতে রেল কী ভূমিকা নেয়, এখন সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.