সোমনাথ রায়, অযোধ্যা: বিকেল থেকে অযোধ্যায় সরযূ নদীতে শুরু হচ্ছে কার্তিক পূর্ণিমার পুণ্য স্নান। প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছেন রামের জন্মভূমিতে। সুপ্রিম কোর্ট রাম মন্দির তৈরির অনুমতি দেওয়ায় এবার কার্তিক পূর্ণিমার পুণ্যস্নান আরও যেন উৎসবের চেহারা নিয়েছে। এই আনন্দের পরিবেশের মধ্যেই আরও এক চমকপ্রদ ঘটনা। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ করতে ছ’লাখ টাকা অর্থ সাহায্যের ঘোষণা করল অসমের দুই মুসলিম সংগঠন।
অল অসম মৌর্য যুগ কাউন্সিল জানিয়েছে, সম্প্রীতি গড়ার লক্ষ্যে এই পুণ্য কাজে তাদের সংগঠন এক লক্ষ টাকা দেবে। ২১টি মুসলিম সংস্থা নিয়ে তৈরি জেএসপিএ সংগঠন ৫ লক্ষ টাকা দেবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে, রাম মন্দির নির্মাণের জন্য মহাবীর সেবা ট্রাস্ট দিচ্ছে দশ কোটি টাকা। ট্রাস্টের প্রধান আচার্য কিশোর কুণাল বলেন, “আমরা চাই এই কর্মকাণ্ড দ্রুত সম্পন্ন হোক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে চাইলে আরও যদি শ্রমিক নিয়োগ করতে লাগে বা অন্যান্য কাজের জন্য জিনিস লাগে তাহলে আমরা আরও টাকা দেব।” অযোধ্যাকে ঢেলে সাজাতে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করতে চলেছে উত্তরপ্রদেশ সরকারও। অযোধ্যায় আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর তৈরি করতে ইতিমধ্যেই ১০০ একর জমি বাছাই করেছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। নতুন এই বিমানবন্দরের নাম হবে শ্রীরাম আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট। শুধু আকাশপথ নয়, জোর দেওয়া হচ্ছে জলপথেও। ২০১৮ সালে ৭,১৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গঙ্গার সঙ্গে সরযু নদীকে মিলিয়ে নতুন জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থার শিলান্যাস করেছিলেন পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়করি। সেই কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ নাকি এসে গিয়েছে। অযোধ্যায় পুণ্যার্থীদের আসতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থাকে উন্নত করার পাশাপাশি রাম জন্মভূমিরে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। আগামী বছরের মধ্যেই নতুন সাজে সাজাতে হবে অযোধ্যাকে। পুণ্যার্থীদের থাকার ব্যবস্থার জন্য নানা মানের হোটেল তৈরিও করা হবে।
অযোধ্যায় রামমন্দির-বাবরি মসজিদ জমি জট মামলায় শনিবার ঐতিহাসিক রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ওই বিতর্কিত জমিতেই মন্দির হবে। মসজিদ নির্মাণে বিকল্প পাঁচ একর জমি দেওয়া হবে। এই ঘোষণায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কিন্তু দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ার লক্ষ্যে অসমের মুসলিম সংগঠন মন্দির নির্মাণের জন্য আর্থিক সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল। অন্যদিকে কার্তিক পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার ভোরে সরযূর রাম কি পৌরি ঘাট ও নয়াঘাটে প্রায় পাঁচ লক্ষ পুণ্যার্থী পুণ্যস্নান করবেন। তারপর এঁদের অনেকেই রামমন্দির চত্বরে ঘুরতে যাবেন। সোমবার বিকেল চারটে থেকেই পুণ্যস্নান শুরু হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই সরযূর তীরে বিশাল মেলা বসেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের জন্য আযোধ্যাবাসী ও রামভক্তরা রাম মন্দির নির্মাণের আনন্দ উৎসব প্রকাশ্যে পালন করতে পারেনি। কিন্তু এবার কার্তিক পূর্ণিমার মেলায় ফের একবার দীপাবলির রোশনাই দেখা যেতে পারে সরযূ তীরে। অযোধ্যার জেলাশাসক অনুজ কুমার ঝা বলেন, “রোজ প্রায় আট হাজার ভক্ত রাম জন্মভূমিতে আসেন। এবার পূর্ণিমা তিথিতে পাঁচ লক্ষ মানুষ আসবেন। তবে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি মেলায় ভক্তদের সংখ্যা এবার আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.