সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কথায় বলে রাখে হরি মারে কে? ঠিক এমনটাই অবস্থা হয়েছিল এক সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক নরেশ বিসওয়ানির সঙ্গে। স্ত্রী সীমন্তিনী ভট্টাচার্য ছিলেন সন্তানসম্ভবা। ২০ মার্চ জন্ম নেয় ফুটফুটে এক সন্তান। ২৩ মার্চ হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বেহালার শ্বশুরবাড়ি যান নরেশ। ঠিক ছিল দু’-একদিনের মধ্যেই ফিরে আসবেন দিল্লি। কিন্তু বিধি বাম! সেদিন সন্ধেয় লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফলে আর বাড়ি ফেরা হয়নি। ভাগ্যিস সঙ্গে ছিল মোজো কিট। তাই কলকাতা থেকেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ মোডে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নরেশ। অবশেষে হাওড়া থেকে ১২ মে চাপেন দিল্লি আসার বিশেষ ট্রেনে। কলকাতা থেকে দিল্লি ফেরার যে বর্ণনা দিলেন নরেশ, তাতে চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। ট্রেনে ছিল না সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই। ছিল না খাবার এমনকী জলের ন্যূনতম ব্যবস্থাও।
রেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল হাতে সময় নিয়ে হাওড়া স্টেশনে আসতে। সেই মতো পাঁচটা পাঁচের ট্রেন ধরতে তিনটের মধ্যেই চলে আসেন নরেশ। লাইন ততক্ষণে পৌঁছিয়ে গিয়েছে হাওড়া ব্রিজ পর্যন্ত। সেখানে সামাজিক দূরত্ব ডুব দিয়েছিল গঙ্গার জলে। একে অন্যের প্রায় ঘাড়ের উপরই উঠে দাঁড়াচ্ছিলেন সবাই। স্টেশনের ভিতরে যেখানে চলছিল ‘টেস্টিং’ সেখানে অবশ্য নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই ছিলেন যাত্রীরা। টেস্টিং বলতে শুধু থার্মাল স্ক্রিনিং। এরপর টিকিট মিলিয়ে চলে আসছিল ভিতরে যাওয়ার ছাড়পত্র। একই ছবি ছিল ট্রেনের ভিতরে। পেশার ‘সুড়সুড়ি’-তে ফার্স্ট এসি কামরায় নিজের লাগেজ রেখে একটু ‘পর্যবেক্ষণ’ করতে বেরিয়েছিলেন নরেশ। গিয়ে দেখেন অন্য সময় যেভাবে বার্থে থাকেন যাত্রীরা ঠিক সেভাবেই ভর্তি হয়ে আছে সবক’টি সিট। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্যান্ট্রি কার থেকে খবর আসে খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই। দিল্লিতে নামার পরেও ছবিটা ছিল হাওড়ার মতো। এখানেও ‘টেস্ট’-এর নামে শুধু থার্মাল স্ক্রিনিং। গোটা রাস্তা সাধারণভাবে আসায় এখানে আর কেউ মানেনি সামাজিক দূরত্ব।
গোটা যাত্রা সম্পর্কে নরেশ বলছিলেন, “অনেক অনুরোধ করতে ওরা একবার চা দিয়ে গিয়েছিল শুধু। এরপর থেকে জলও কিনে খেতে হয়েছে। ফার্স্ট এসি-তেই এই অবস্থা। তাহলে বাকিগুলো ট্রেনে কী ছিল বুঝতেই পারছেন।” আরও বলেন, “আমি তো ভেবেছিলাম ফার্স্ট এসি কামরায় হয়তো এক বা দু’জন থাকবেন। আর অন্য জায়গাতেও একটু গ্যাপ দিয়ে দিয়ে যাত্রী তোলা হবে। অন্তত থ্রি টিয়ার গুলোর মাঝের বার্থটা ফাঁকা থাকবে সেটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু আদতে দেখলাম কোথায় কী? অন্য সময় যেমন ব্যবস্থা থাকে, এখনও তাই। খাওয়ার বলতে চিপস, চানাচুর আর কাপ নুডলস, কাপ উপমা এই। শুধু ভাবছি, পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা। ওঁরা যে কী অবস্থায় ফিরছেন, কে জানে?” স্টেশনে নিজের গাড়ি ডেকে নিয়েছিলেন নরেশ। তাতে করেই নয়ডা ৮৩ নম্বর সেক্টরে সহযাত্রীকে নামিয়ে বাড়ি ফেরেন। অভিষেক গুপ্তা নামক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের বক্তব্য, “নরেশবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ ট্রেনে। ভাগ্যিস উনি ছিলেন। নাহলে কীভাবে বাড়ি ফিরতাম জানি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.