জগন্নাথ দৈতাপতি (পুরীর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত): নবকলেবরে মহাপ্রভু জগন্নাথ মন্দিরে আসীন হয়েছেন এক বছর হতে চলল৷ আবার এসেছে স্নানযাত্রার শুভ মুহূর্ত৷ দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত এরই মধ্যে পুরীতে এসে পৌঁছতে শুরু করেছেন৷ প্রতিদিন দলে দলে সবাই নীলমাধব মহাপ্রভুর দর্শন নিচ্ছেন৷ এবার আবার আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া-র মন্দির সংস্কারের জন্য খুব কাছ থেকে জগন্নাথদেবের দর্শন হচেছ না৷ তবে নাটমন্দিরে দাঁড়িয়ে যে দর্শন পাচ্ছেন তাতেই খুশি ভক্তরা৷ স্নানযাত্রার পৌরাণিক কাহিনি অনেকেরই জানা৷ তবে মহাপ্রভুর স্নানযাত্রা ঘিরে ভগবানের হস্তীবেশ ধারণ করার অসাধারণ কাহিনি অনেকে জানেন না৷ এটা পশ্চিমবঙ্গের ভক্তদের জন্য একটু বলা দরকার৷
মহাপ্রভু জগন্নাথের পরম ভক্ত ছিলেন গুজরাতের সাধক পুরুষ শ্রদ্ধেয় গণপতি ভট্ট৷ তিনি শুধুমাত্র বিষ্ণুর পুজো-আরাধনা করতেন৷ তবে গণপতি ভট্ট-র একই সঙ্গে বিশ্বাস ছিল, প্রভু জগন্নাথ-ই পরম ব্রহ্ম৷ তাঁর শ্রীচরণে ঠাঁই পেলে দেহবন্ধন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়া যাবে৷ যেমন ভাবনা, তেমন কাজ৷ যাত্রা শুরু করলেন পুরীধামের উদ্দেশে৷ পথে পুরী শহরের কাছে আঁধারনালার কাছে মহাপ্রভুকে দর্শন করে ফিরে আসা কয়েকজন ভক্তর সঙ্গে দেখা হল৷ গণপতি জানতে চাইলেন, তাঁরা কেউ জগন্নাথকে দর্শন করেছেন কি না? সবাই একবাক্যে মহাপ্রভু দর্শনের অপূর্ব অভিজ্ঞতার কথা যেমন জানালেন, তেমনই বললেন, যে যা মনোবাসনা নিয়ে জগন্নাথদেবের কাছে যান তা পূর্ণ হয়৷ কারণ জগন্নাথদেব হলেন স্বয়ং বাঞ্ছা কল্পতরু৷
পুরীর মন্দিরে যেদিন গণপতি ভট্ট পৌঁছলেন সেদিন ছিল মহাপ্রভুর স্নানযাত্রার দিন৷ দেখলেন সিংহদুয়ারের কাছে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনকে সিংহাসনে বসিয়ে স্নান করানো হচ্ছে৷ ঘড়া ভর্তি জল নিয়ে এসে দারুব্রহ্মকে স্নানের সেই অপূর্ব পুণ্যমুহূর্ত দর্শন করে গণপতি কিছুটা তৃপ্ত হলেন ঠিকই, কিন্তু মনোবাসনা সম্পূর্ণ পূর্ণ হল না৷ কারণ গণপতির ধারণা ছিল জগন্নাথের রূপ হবে গণেশের মূর্তির মতো৷ অর্থাৎ হাতির মুখের মতো৷ স্বভাবতই সেই রূপে দেখতে না পেয়ে কিছুটা মানসিক ধাক্কা খেলেন গণপতি ভট্ট৷ ফিরে চললেন নিজের বাড়ির উদ্দেশে৷
ভক্ত গণপতির মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন অন্তর্যামী স্বয়ং জগন্নাথ মহাপ্রভু৷ মন্দিরের দায়িত্বে থাকা ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজার বংশধরকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বললেন, “ডেকে আনো ওই ভক্তকে৷ ও আমার হস্তীমুখ রূপ দেখতে পাবে৷” রাজপ্রতিনিধি গণপতিকে ডেকে আনলেন৷ সেদিন মহাপ্রভুর ভোগগ্রহণের সময় চলছিল৷ ভট্ট দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলেন, স্বয়ং মহাপ্রভু শুঁড় দিয়ে রাঁধা ভোগ গ্রহণ করছেন৷ দেবতার এই নয়া রূপ হস্তীমুখ দর্শন করে অভিভূত ভট্ট দেবতার পায়ে নিজেকে সমর্পণ করেন৷ শোনা যায়, জগন্নাথের দেহে তিনি লীন হয়ে গিয়েছিলেন৷
গণপতি ভট্টর শেষ ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে প্রতিবছর স্নানযাত্রায় স্নানের শেষে আমরা সবাই মহাপ্রভু জগন্নাথ ও বলরামকে হস্তীবেশে সাজিয়ে দিই৷ আর দেবী সুভদ্রার মুখ পদ্মফুলে ঢেকে রাখি৷ মন্দিরের পুরোহিত থেকে শুরু করে ভক্তরা সবাই স্নানযাত্রায় দেবতার এই হস্তীরূপকে ‘গণেশ অভিষেক’ নামে ডেকে থাকেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.