সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নামেই রহস্য ছিল। দু’ধরনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সেটা আরও বেড়েছিল। কারণ কোন তত্ত্বটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল চরম ধোঁয়াশা। তবে শেষপর্যন্ত সেই দ্বন্দ্ব-দোলাচলে ইতি পড়ল। জানা গেল, দু’টি তত্ত্বই ঠিক। দু’টি তত্ত্বই প্রযোজ্য।
সমুদ্রতল থেকে ৫,০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় হিমালয়ের কোলে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় ওয়ান গ্রামে অবস্থিত রূপকুণ্ড হ্রদ। যাকে ‘Mystery Lake’ বা ‘রহস্য হ্রদ’ও বলা হয়। হ্রদ ঘিরে জনশ্রুতি ছিল যে এখানে নাকি মানুষের হাড়গোড় দেখা যায়। তবে যাঁরা ট্রেকিং করেন বা করতে ভালবাসেন, তাঁদের কাছে এই হ্রদের নাম অচেনা নয়। কারণ হিমালয়ের পাহাড়ি পথে ট্রেকিং করতে গিয়ে এঁদের অনেকেই হ্রদের টলটলে, স্বচ্ছ জলের নিচে হাড়গোড় ভেসে থাকতে দেখেছেন। এবার সে সব হাড়গোড় কার, কী করেই বা এখানে এল, সেই প্রশ্ন বহু বছর ধরেই ভাবাচ্ছিল বিজ্ঞানীদের। সদুত্তর পেতে চলছিল গবেষণাও।
এক মহল থেকে জানা গিয়েছিল, হাড়গোড়গুলি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিবর্গের, যাদের অস্তিত্ব ছিল অষ্টম শতকে। আবার আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছিল, সেগুলি ভূমধ্যসাগরের পূর্ব প্রান্তের কোনও দেশ থেকে আগত এক দল মানুষের, যাঁরা সপ্তদশ শতকে ভারতে পা রেখেছিল। আর তারপর এই হ্রদের আশপাশেই বসতি গড়ে তোলে। শুধু তাই নয়, সামনে এসেছিল আরও একটি বিশ্লেষণ।
আর তা অনুযায়ী, হাড়গুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে আসা জাপানি সেনাদের, যাঁরা পরে এদেশেই মারা যান। এবার এত রকম ব্যাখ্যার মধ্যে কোনটিতে সারবত্তা আছে আর কোনটিতে নেই-তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চলছিল। কিন্তু, এ নিয়ে সাম্প্রতিকতম যে গবেষণা হয়েছে তারপরই চূড়ান্ত ঘোষণাটি করেছেন হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুসার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির তরফে কুমারস্বামী থঙ্গরাজ। তাঁর দাবি, হ্রদের জলে যে হাড়গোড় মিলেছে, তা দু’টি পৃথক মানবজাতির। পৃথক পৃথক সময়ে এ দেশে তাদের অস্তিত্ব ছিল। একদল ভারতে তথা রূপকুণ্ডে এসেছিল অষ্টম শতকে। অন্য দলটি এসেছিল সপ্তদশ শতকে। এই দ্বিতীয় দলটি এসেছিল
ভূমধ্যসাগরীয় কোনও দেশ যেমন গ্রিস থেকে। থঙ্গরাজের আরও দাবি, এই হ্রদে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পরপর দু’বার কোনও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছিল। আর তার জেরেই প্রাণ হারান সকলে। তবে এত কিছু বললেও ঠিক কী কারণে পৃথক পৃথক এই জনজাতি রূপকুণ্ডে এসেছিল, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি থঙ্গরাজ।
প্রসঙ্গত, থঙ্গরাজের আগে এই একই বিষয় নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এসেছে লখনউয়ের বীরবল সাহানি ইনস্টিটিউট অফ প্যালেওসায়েন্সেস-এর (বিএসআইপি) বিজ্ঞানীরা। প্রতিষ্ঠানের ডিএনএ ল্যাবের এক সিনিয়র বিজ্ঞানী নীরব রাইয়েরও দাবি, হ্রদ ও তার সন্নিহিত এলাকায় অষ্টম এবং সপ্তদশ শতকে দু’ধরনের মানবজাতির আগমন ঘটেছিল। তাই দুটি ভিন্ন সময়ের দু’ধরনের হাড়গোড় মিলেছে সেখানে। এ নিয়ে তাই আর কারও মনেই কোনও জটিলতা থাকা উচিত নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.