ফাইল ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনার প্রকোপ কাটিয়ে পৃথিবী খানিকটা থিতু হতেই এবার নয়া শত্রুর আবির্ভাব! নয়া এক মারণ ভাইরাসের ব্যাপক প্রকোপে কপালে চন্তার ভাঁজ পড়ল স্বাস্থ্য কর্তাদের। এই আতঙ্কের নাম চাঁদিপুরা ভাইরাস। জানা যাচ্ছে, গত ৫ দিনে এই ভাইরাসের প্রকোপে গুজরাটে মৃত্যু হয়েছে ৬ শিশুর। এর পরই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে কার্যত ‘অ্যালার্ট মোডে’ চলে এসেছে গুজরাটের স্বাস্থ্যদপ্তর।
গুজরাট সরকারের তরফে জানা যাচ্ছে, শুরুতে চাঁদিপুরা ভাইরাসে মাত্র ৪ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছিল এক হাসপাতালে। তবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সংখ্যাটা দুই অংক ছুঁয়ে ফেলেছে। এ প্রসঙ্গে সোমবার বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হৃষিকেশ প্যাটেল বলেন, গত ৫ দিনে ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে এখানে। প্রাথমিকভাবে আমাদের অনুমান চাঁদিপুরা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই এই মৃত্যু। পাশাপাশি আরও ১২ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ৪ জন সবরকাঁটা জেলার, ৩ জন অরাবলি জেলার ও মহিসাগড় ও খেড়াতে ১ জন করে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি রাজস্থানের ২ জন ও মধ্যপ্রদেশের এ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখানে চিকিৎসাধীন।
জানা গিয়েছে, চলতি মাসে প্রথম চাঁদিপুরা ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় গুজরাটে। হিম্মত নগরে এক সরকারি হাসপাতালে গত ১০ জুলাই ৪ শিশুর মৃত্যু ঘটে। চিকিৎসকদের তরফে দাবি করা হয় চাঁদিপুরা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই এই ঘটনায়। যদিও নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃতদেহের রক্তের নমুনা পাঠানো হয় এনআইবি-তে। পরে ওই হাসপাতালেই আরও ৪ শিশুর শরীরে একই রকম লক্ষ্মণ দেখা যায়। এর পরই সতর্ক হয় প্রশাসন। গুজরাটের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদিপুরা ভাইরাস ছোঁয়াচে নয় ঠিকই তবে ব্যাপক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা ৪,৪৮৭টি বাড়িতে ১৮,৬৪৬ জনকে পরীক্ষা করেছি। এই ভাইরাস যাতে না ছড়ায় তার জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।’
ভাইরাসের লক্ষণ
চাঁদিপুরা ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ হল জ্বর, ফ্লুর মতো উপসর্গ এবং তীব্র এনসেফালাইটিস (মস্তিষ্কের প্রদাহ)। অল্প সময়ের মধ্যেই জ্বর ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তার পর শুরু হয় খিঁচুনি, ডায়রিয়া, মস্তিষ্কে প্রদাহ ও বমি। শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ প্রবল জ্বর, বমি, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা এবং খিঁচুনি। এমন কিছু হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
কতটা বিপজ্জনক এই ভাইরাস
গুজরাট স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, চাঁদিপুর ভাইরাস চরিত্রগতভাবে ছোঁয়াচে নয়। তবে গত কয়েকদিনে যেভাবে ব্যাপকভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া তাতে একে মোটেই হাল্কা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। সকলের উচিত এই ভাইরাস নিয়ে সতর্ক হওয়া। ভাইরাসটি এতটাই বিপজ্জনক যে ভাইরাসে আক্রান্ত লক্ষণ শিশুদের শরীরে দেখা দেওয়ার ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, এই ভাইরাস শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্যই মারাত্মক। এই ভাইরাসের সংক্রমণ সাধারণত বর্ষাকালে দেখা যায়। এদিকে সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই ভাইরাসের প্রকোপ গুজরাটে দেখা গেলেও ভারতে এই ভাইরাস অনেক দিনের পুরানো। ১৯৬৫ সালে প্রথমবার এই মহারাষ্ট্রের চাঁদিপুরা গ্রামে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এবং গ্রামের নামেই ভাইরাসের নামকরণ করা হয় চাঁদিপুরা ভাইরাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.