সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভূস্বর্গে শান্তি ফিরেছে, জঙ্গিমুক্ত হয়েছে বলে কেন্দ্র দাবি করলেও বাস্তবে যে তা হয়নি তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল পুঞ্চে সেনাবাহিনীর উপর হামলার ঘটনা। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পরিস্থিতি যে রীতিমতো চিন্তার তা স্পষ্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকদের কথায়। রাজৌরি-পুঞ্চ সেক্টরে সাম্প্রতিককালে একের পর এক জঙ্গি নাশকতা প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কর্নেল এস এস পাঠানিয়া বলেন, “খুবই দুশ্চিন্তার সময়। গত দুমাসে এই নিয়ে এখানে দুবার সন্ত্রাস চলল। গত দুবছরে এখানে ৩৫ জন সেনা শহিদ হয়েছেন। কেন, হচ্ছেটা কী? কীসের গাফিলতিতে জঙ্গিরা এত সাহস পাচ্ছে?”
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) অনিল গৌরেও সন্ত্রাস ঠেকাতে অমিত শাহ ও রাজনাথ সিংয়ের মন্ত্রকের ব্যর্থতাকেই ইঙ্গিত করেছেন। পুলওয়ামার ধাঁচে সেনার উপর হামলা চালিয়ে পাকিস্তান উপত্যকায় ফের জঙ্গি সংগঠন মজবুত করতে চাইছে বলে দাবি তাঁর। অনিলের কথায়, “সন্ত্রাসকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সেই ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট গাফিলতি আছে। কাশ্মীরের সীমান্তে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তাবাহিনীকে আরও তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে। সর্বত্র তাদের ঘাঁটি তৈরি করে সমস্তরকম নাশকতাকে দূর করতে হবে।”
বড়দিনের আগে পুলওয়ামার স্মৃতি ফিরিয়ে গত বৃহস্পতিবার জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) পুঞ্চ জেলার সুরনকোট মহকুমার দে-রা কি গালির কাছে তিন-চার জন জঙ্গি সেনা গাড়িতে হামলা চালায়। জঙ্গিরা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। সংঘর্ষে শহিদ হন পাঁচ জওয়ান। আহত দুজন। শুক্রবার ভোররাত থেকেই পুঞ্চের জঙ্গল এলাকায় জঙ্গিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, হোয়াইট নাইট কর্পস ও রাজ্য পুলিশ।
এদিন গ্রাউন্ড জিরোয় পৌঁছে যান ওই কর্পসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল সন্দীপ জৈন-সহ এনআই কর্তা। সেনার এক শীর্ষ আধিকারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় দফায় দফায় হেলকপ্টারে করে আকাশপথ থেকে নজর রাখা হচ্ছে। তল্লাশি অভিযানে নামানো হয়েছে স্নিফার ডগও। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা। পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের হামলায় প্রাণ হারান ৪০ জন সেনা।
কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ৎসনা করে এদিন জম্মুতে পাকিস্তান বিরোধী মিছিল বের করে পুত্তলিকা পোড়ায় জম্মু স্টেটহুড অর্গানাইজেশন। বিক্ষোভ দেখায় ডোগরা ফ্রন্ট শিবসেনাও। অন্যদিকে শিবসেনার রাজ্যসভা সাংসদ সঞ্জয় রাউতের প্রশ্ন, “২০১৯-এর পুলওয়ামা হামলার পর কেন্দ্র তার পরের বছর লোকসভা ভোটের আগে শহিদদের সামনে রেখে দেশবাসীর সহানুভূতি পেয়ে জিতেছিল। এবার পুলওয়ামার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ২০২৪-এ লোকসভার ভোট চাইবে বিজেপি সরকার?” তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল না রেখে ঘুমাচ্ছিল। তারা চাইছিল নাশকতা হোক। শহিদ জওয়ানদের সামনে রেখে আবার রাজনীতি করে ভোটে জিততে চাইবে বিজেপি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.