সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত কাশ্মীর। ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। সৌন্দর্যের বর্ণনা ভুলে ভূস্বর্গের বাতাসে এখন শুধুই আতঙ্কের স্রোত। দলে দলে কাশ্মীর ছাড়ছেন পর্যটকরা। এই ভয়ংকর ঘটনা পর্যটনের দিক থেকে বিরাট ধাক্কা দিল কাশ্মীরকে।
তিনদিন আগেও চেনা ছন্দে ছিল উত্তর ভারতের এই ‘সৌন্দর্য নগরী’। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় নেমে আসে সাক্ষাৎ যম। জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় একের পর এক শরীর। রক্তে রাঙা হয়ে ওঠে বৈসরন তথা কাশ্মীরের আকাশ-বাতাস। ব্যস, তারপর খানিক স্তব্ধতা এবং অবশেষে দিকে দিকে মেঘভাঙা কান্না।
বৃহস্পতিবার হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর ফাঁকা ধু ধু করছে কাশ্মীরের রাস্তাঘাট। নিস্তব্ধ চারদিক। বন্ধ দোকানপাট। ডাল লেকের উপর সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক খালি শিকারা। এক শিকারা মালিকের কথায়, “তিনদিন আগেও এই জায়গাটা জমজমাট ছিল। একটা শিকারাও ফাঁকা ছিল না। কিন্তু আজ হঠাৎ কেমন সব বদলে গিয়েছে।” পহেল গাঁওয়ের হোটেল, রেস্তরাঁ, দোকানপাট সবই বন্ধ।
অতীতেও জঙ্গি তৎপরতার সাক্ষী থেকেছে উপত্যকা। কিন্তু বেশ কিছু সময় ধরেই জঙ্গিদের নজর মূলত ছিল নিরাপত্তাবাহিনীর দিকে। পর্যটকরা ছিলেন অনেকটাই নিরাপদ। সেখানে আচমকা পর্যটকদের উপর এই হামলায় বিচলিত কাশ্মীরের মানুষজন। ভূস্বর্গে নেমেছে শোকের ছায়া। কাঁপন ধরেছে ব্যবসায়ীদের মনে। নিন্দা করে হিংসার বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষ। রাস্তায় নেমেছে প্রতিবাদের ঢল। শ্রীনগর থেকে জম্মু, দিকে দিকে হয়েছে মোমবাতি মিছিল। ‘ট্যুরিস্ট হামারা জান হ্যায়’ লেখা পোস্টার তুলে ধরে বিক্ষোভে শামিল হয়েছে জনতা। কাশ্মীরের এক হোটেল ব্যাবসায়ী বলেন, “এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এখানে আটকে থাকা পর্যটকদের আমরা সবাই সাহায্য করব।”
কাশ্মীর থেকে পর্যটকদের ফেরাতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA)। নির্দেশিকা জারি করে বিমান সংস্থাগুলিকে শ্রীনগর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিমান সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। সঙ্গে বিমানভাড়া না বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্যানসেলেশন ও রিশিডিউলিং ফি-তেও ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৩৭ যাত্রীকে কাশ্মীর থেকে ফেরত হয়েছে বলে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানিয়েছেন বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডু।
উল্লেখ্য, বেসরকারি হিসাব বলছে, পহেলগাঁও হামলায় অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। এখনও বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি। পুলওয়ামার পর এটাই ভারতের বুকে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা। অন্তত মৃতের সংখ্যার নিরিখে। সূত্রের দাবি, মৃতদের মধ্যে দু’জন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।
নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই মৃতের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সরকারিভবে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ বছর বয়সি নৌসেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। মৃতের তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু, ওড়িশার বাসিন্দারা। এছাড়া, নেপাল ও আরব আমিরশাহীর বাসিন্দা দুই বিদেশিকেও হত্যা করেছে জঙ্গিরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.