সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একটি ইনজেকশন তৈরি করতে সাধারণত খরচ পড়ে ২ টাকার কিছু সামান্য বেশি। অথচ সেই ইনজেকশনই একজন ভারতীয় রোগীকে কিনতে হচ্ছে প্রায় পাঁচগুণ বেশি দামে। আপাতদৃষ্টিতে লাভের অঙ্ক কম মনে হলে মনে রাখতে হবে, ভারতে প্রতি বছর অন্তত ৩০০ কোটি ইনজেকশন বিক্রি হয়। অর্থাৎ, প্রতিবছর ভারতীয়দের কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করে চিকিৎসা পরিষেবা কিনতে হচ্ছে।
একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যম এভাবেই দেশের ভিতর চলা সবচেয়ে বড় দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে। একটি প্রতিবেদনে তাদের দাবি, এই দুর্নীতি হয়তো প্রতিদিন চোখে দেখা যায় না, কারণ কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ না থেকে এই দুর্নীতির জাল গোটা দেশেই ছড়িয়ে গিয়েছে। হিপ ইমপ্লান্ট এখনকার দিনে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানলে অবাক হবেন, একটি হিপ ইমপ্লান্ট করতে ৮,৯০৬ টাকা খরচ পড়ে। কিন্তু রোগীর পরিবারকে এই অপারেশনের জন্য ১.২৯ লক্ষ টাকা বিল ধরানো হয়। অর্থাৎ, একটি অপারেশনে ১,৪৪৮ শতাংশ লাভ হয়। এ তো গেল মাত্র দুটি উদাহরণ। ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (এনপিপিএ) কার্ডিয়াক স্টেন্টের দামের উর্ধ্বসীমা ২৯,৬০০ টাকা বেঁধে দেওয়ার পর একরম হাজার উদাহরণ প্রকাশ্যে এসেছে।
দেখা গিয়েছে, সাধারণত কোনও চিকিৎসা সংক্রান্ত ডিভাইসের দামের ৭০০ গুণ বেশি দাম দিতে হয় রোগী ও তাঁর পরিবারকে। শুধু কার্ডিয়াক স্টেন্টস নয়, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে কন্ট্যাক্ট লেন্স- ৩০০ থেকে ৬০০ গুণ বেশি দামে কিনতে বাধ্য হন রোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিস্ট্রিবিউটর জানিয়েছেন, হাঁটু প্রতিস্থাপন করতে ৯,৬২৪ টাকা খরচ পড়ে, অথচ হাসপাতাল বা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এই অপারেশনের জন্য অন্তত ৪৬ হাজার টাকা নেয় রোগীদের কাছ থেকে।
এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন অভয় শুক্লা। তিনি এই ঘটনাকে “দেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি” বলে উল্লেখ করেছেন। জন স্বাস্থ্য অভিযানের জাতীয় আহ্বায়ক শুক্লা বলেছেন, “অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন গ্রাহকরা কোনও পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী দাম নিয়ন্ত্রণ করেন, মেডিক্যাল মার্কেটে তেমনটা হয় না। এখানে একজন ডাক্তার চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির দাম নির্ধারণ করে দেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তার যদি সৎ হন, তাহলে রোগী বা তাঁর পরিবার বেঁচে গেল। কিন্তু ডাক্তার যদি নিজের আর্থিক লাভের কথা ভাবেন, তাহলে রোগী বা তাঁর পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যান।” এরকম আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত সেই ডাক্তাররাই জানাচ্ছেন, ওষুধের বাজারে ৫ টাকা দামের ওষুধের উৎপাদন বন্ধ করতে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে নামিদামি সংস্থাগুলি। ওই একই ওষুধ তারা ১০ টাকা দামে বানিয়ে বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর, স্টকিস্ট, ফার্মেসিকে ইনসেনটিভ দিচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.