ফাইল ছবি
শুভময় মণ্ডল: দলে ব্রাত্য হয়েছিলেন আগেই। এবার নির্বাচনী বাজারে নিজের গুরুত্ব ফের ফিরে পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করলেন না প্রাক্তন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। পরবর্তী সময়ে যিনি রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বও সামলেছেন। সোমবার দুপুরে শঙ্কুদেব পণ্ডা যোগ দিলেন বিজেপিতে। গেরুয়া উত্তরীয় পরিয়ে দলে স্বাগত জানান এরাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। দিন কয়েক আগে দিল্লিতে গিয়েছেন শঙ্কুদেব। সেখানে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ঘন ঘন আলোচনা, বৈঠকের পর চূড়ান্ত হয়েছে তাঁর যোগদানের খবর। গেরুয়া শিবিরের হাত ধরে একসময়কার দোর্দণ্ডপ্রতাপ ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা ফের নতুন উদ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করতে চলেছেন।
দেশপ্রেমের নামে দাঙ্গায় ইন্ধন বিজেপি-আরএসএসের, অভিযোগ মমতার
ছাত্রাবস্থা থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত বছর প্রায় বছর চল্লিশের শঙ্কুদেব পণ্ডা। সেসময় বাম ছাত্র সংগঠনের বিপরীতে গিয়ে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শিবিরে তাঁর হাত পাকানো অনেকের কাছেই ছিল অতিরিক্ত সাহসিকতার কাজ। কিন্তু ততদিনে শঙ্কুদেব তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ফেলেছেন। তাঁরই আদর্শে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরির পর শঙ্কুদেব পণ্ডা ছাত্র সংগঠনে যোগ দেন। টিএমসিপি নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য। পরবর্তী সময়ে দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক তছরূপের অভিযোগে মামলা দায়ের হওয়ার পর ২০১৪ সালে দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে নারদা স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছিল শঙ্কুদেব পণ্ডাকে। ভিডিও অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নতুন সংস্থা খুলতে প্রশাসনিক অনুমোদন পাইয়ে দেওয়ার জন্য তিনি জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। মামলাটি সিবিআই তদন্তের আওতাধীন হওয়ায় তাঁকেও একাধিকবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জেরার মুখে পড়তে হয়। সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। চাওয়া হয় প্রয়োজনীয় তথ্য, নথি।
[কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়, বিস্ফোরক রমন সিং]
এরই মাঝে নিজের কেরিয়ার অন্যভাবে সাজাতে শুরু করেন শঙ্কুদেব পণ্ডা। ২০১৭ সালে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেন সিনেমা – কমরেড। ছবিটি বক্স অফিসে তেমন সাফল্য না পেলেও, সমালোচক মহলে প্রশংসিত হয়। তারপর বেশ খানিকটা সময় কোনও রাজনৈতিক দলের সংস্পর্শে ছিলেন না শঙ্কুদেব। এবার গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন রাজ্য স্তরের এই তৃণমূল নেতা। সেইসঙ্গে একদা পছন্দের পুরনো দলের সঙ্গে শুরু হচ্ছে তাঁর নতুন রাজনৈতিক লড়াই।
এদিন গেরুয়া শিবিরের প্রাপ্তি তৃণমূল শিবির ঘনিষ্ঠ আরেক নেতা। বর্ষীয়ান অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। দিল্লিতে শঙ্কুদেব পণ্ডার পাশাপাশি তাঁকেও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ২০১৪ সালে দক্ষিণ দিল্লি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা। কিন্তু রাজনীতির পূর্ব কোনও অভিজ্ঞতা না থাকায়, কংগ্রেসের বহু অভিজ্ঞ প্রার্থী, প্রাক্তন মন্ত্রী অজয় মাকেনের বিরুদ্ধে হেরে যান। তবে তাঁর ক্যারিশমা এবং বলিমহলে পরিচিতিকে নির্বাচনী কাজে লাগাতে পদ্ম শিবির দলে টেনেছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের ধারণা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.