গৌতম ব্রহ্ম: নভেম্বরের অর্ধেক শেষ। এখনও গঙ্গার (Ganges) তলায় বারাণসীর (Varanasi) হরিশচন্দ্র ঘাট। শবদেহ পুড়ছে শ্মশান লাগোয়া রাস্তায়। কখনও দুই বাড়ির মাঝখানের একফালি করিডরে। পরিস্থিতি এমন যে, বাড়ির ব্যালকনি থেকে জল ফেললে চিতার উপর এসে পড়ছে। চিতার ধোঁয়া সরাসরি ঢুকে পড়ছে আশপাশের বাড়িগুলোয়।
একই অবস্থা মণিকর্ণিকা ঘাটের। শ্মশানের প্রথম ধাপ পুরোপুরি জলের তলায়। যেখানে একসঙ্গে কুড়িটি দেহ দাহ করার ব্যবস্থা ছিল, সেখানে এখন ভরসা শুধু দ্বিতীয় ধাপ। বড়জোর দশটি চিতা জ্বালানোর ব্যবস্থা আছে। সেখানেই কোনওক্রমে অন্তিম সৎকার চলছে। মৃতের পরিবারকে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দশাশ্বমেধ ঘাট-সহ কাশীর গঙ্গার অন্য ঘাটগুলোও তথৈবচ। আরতি হচ্ছে ঘাট লাগোয়া হেরিটেজ বাড়ির তিনতলার ছাদে। গঙ্গার মাঝখানে হাউস বোটে বসে আরতি দেখতে রীতিমতো কসরত করতে হচ্ছে। মোবাইলে সর্বোচ্চ জুম করেও পরিষ্কার ছবি তোলা যাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বর্ষার সময় প্রতিবারই গঙ্গার জলস্তর বাড়ে। কিছুদিনের জন্যে শ্মশানের একটা অংশ জলে ডুবে যায়। কিন্তু বরাবরই সেপ্টেম্বরের শেষাশেষি জল নেমে গিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যায় ঘাটগুলো। কিন্তু এবার নভেম্বর গড়িয়ে গেলেও জল নামেনি। এখনও ভুবনবিখ্যাত কাশীর দুই শ্মশানঘাট জলের তলায়। ফলে শবদাহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন বহু মানুষ। বিশিষ্ট গঙ্গা বিশেষজ্ঞ রাকেশ পাণ্ডে জানালেন, “কুড়ি বছর ধরে বারাণসীর গঙ্গা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু কখনও হরিশচন্দ্র ও মণিকর্ণিকাকে এতদিন ধরে জলের তলায় দেখিনি।” তাঁর পর্যবেক্ষণ, এবার বর্ষা বিলম্বিত ছিল। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে টানা দশদিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেই বাড়তি জলের ধারাই বয়ে চলেছে গঙ্গায়। ফলে গঙ্গার ঘাট ধরে হাঁটাচলা বন্ধ। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে বলে গঙ্গায় নৌকাবিহারও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় জল কমিশনও গঙ্গার জলস্তর নিয়ে বারাণসী প্রশাসনকে সতর্ক করেছে। স্থানীয় নৌকাচালকরা জানিয়েছেন, নৌকাবিহারে গঙ্গার ঘাট দর্শনের জন্যই পর্যটকরা বারাণসীতে আসেন। জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় নৌকাবিহার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি জলে গিয়েছে। আগে জলপথে অনেক শবদেহ অন্ত্যেষ্টির জন্যে নিয়ে আসা হত। এখন সড়কপথই ভরসা। শ্মশানের কাঠ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগে দোকানের সামনে লম্বা লাইন পড়ত। আর এখন কাঠ বিক্রির পরিমাণ তলানিতে ঠেকেছে। শবদেহ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে শ্মশানযাত্রীদের। কবে এই ভোগান্তি কমবে মা গঙ্গাই জানেন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.