সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শান্তির নামে, রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের বিরোধিতায়, স্বাধীনতার দাবি তুলে বছরের পর বছর উপত্যকায় বনধ ডেকেছেন জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা৷ যার জেরে দীর্ঘ সময় ধরে কাশ্মীরের শিক্ষা জীবন কার্যত থমকে ছিল৷ ছোট পড়ুয়ারা অনেকদিনই স্কুল যেতে পারেনি৷ মাঝপথে থেমে গিয়েছে পড়াশোনা৷ অথচ বাস্তবে দেখা গিয়েছে, বনধ আহ্বানকারী সেসব নেতাদের নিজেদের সন্তানরা বিদেশে দিব্যি সুস্থ পরিবেশে পড়াশোনা শিখছে৷ তাহলে রাজ্যবাসীর সঙ্গে এই দ্বিচারিতা কেন? এবার সরকারি স্তরে এই প্রশ্নের মুখে পড়েছে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব৷ তাঁদের উপর রীতিমতো নজরদারি চলছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত তিন বছরের মধ্যে অন্তত ২৪০দিনই জম্মু-কাশ্মীরের স্কুল,কলেজ বন্ধ ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ডাকা বনধে৷ এবং তা যে কোনও সময়েই ডাকা হয়৷ যাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে উপত্যকার বহু মানুষ ধর্মঘটে যোগ দেন, তাঁরা কিন্তু তলে তলে নিজেদের আখেরটি গুছিয়ে নিয়েছেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, এই বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের আত্মীয় বা সন্তানরা বেশিরভাগই বিদেশে পড়াশোনা করে কেরিয়ার তৈরি করছে, সেখানে চাকরি করছে৷ অর্থাৎ একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যতের রাস্তায় হেঁটেছে৷ অথচ নিজের রাজ্যের ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরির পথে এই হুরিয়ত নেতারাই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷
জানা যাচ্ছে, জেলবন্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেত্রী আশিয়া আনদ্রাবির দুই পুত্র যথাক্রমে মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করে৷ হুরিয়ত নেতা বিলাল লোনের সন্তানরাও লন্ডন, অস্ট্রেলিয়ায় থাকে শিক্ষাসূত্রে৷ আরেক হুরিয়তপন্থী সংগঠনের শীর্ষ নেতা আসরাফ সেহরাই-এর ছেলেরা সৌদি আরবে কর্মরত৷ আর সবচেয়ে জনপ্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির পরবর্তী দুই প্রজন্মই পাকিস্তান এবং তুরস্কে রয়েছে৷ অর্থাৎ এঁদের প্রত্যেকেরই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একেবারে নিশ্ছিদ্র সুরক্ষার ঘেরাটোপে বন্দি৷
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীর উপত্যকায় ক্রমশ শক্তিক্ষয় হওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতানেত্রীদের এমন দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে আসায় যথেষ্ট বিরক্ত সাধারণ মানুষজন৷ শ্রীনগরের এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘মুশকিল হচ্ছে, তাঁরা যাঁদের জন্য লড়াই করছেন বলে দাবি তুলে এসেছেন, তাঁদের কথাই ঠিকমতো ভাবছেন না৷ তাঁরা ঘনঘন বনধ ডাকছেন৷ আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, সেই তথ্য পেশ করে এই প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে, আদৌ কি এভাবে বনধে সব বানচাল করে দেওয়ার অধিকারী তাঁরা?’
বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের পরিবার সম্পর্কে এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই নজরদারি বাড়িয়েছে কেন্দ্র৷ এনিয়ে তদন্ত হবে৷ সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করলে, যথাযথ শাস্তি দেওয়ার ভাবনা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের৷ কারণ, এভাবে সন্তান, আত্মীয়দের বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে এসব নেতারা হাওয়ালা চক্রের সঙ্গে সূক্ষ্মভাবে যুক্ত থাকছেন কি না, তাও দেখার৷ তবে এর পালটা যুক্তিও আছে৷ জম্মু-কাশ্মীরের অন্যতম রাজনীতিবিদ শাহ ফয়জলের যুক্তি, প্রত্যেকের নিজের সন্তানকে সুরক্ষিত রাখার অধিকার আছে৷ অন্য রাজনীতিকরাও তো নিজেদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়তে পাঠান৷ হুরিয়ত নেতারাও তাই করছেন৷ তাঁদের অধিকার আছে৷’ এই যুক্তি মেনে নিলে বলতেই হয়, সেক্ষেত্রে বনধ উপেক্ষা করে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আরও বড় অধিকার রয়েছে উপত্যকার সাধারণ মানুষের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.