সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশরক্ষায় দক্ষিণ কাশ্মীরের প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে আটকা পড়ে তাঁরা। তবুও খুশির আবহে ভাসছেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ানরা। কারণ হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানিকে নিকেশ করার পুরস্কার স্বরূপ তাঁদের ইউনিটের তিন জওয়ানকে সেনা মেডেল প্রদান করা হল। ২০১৬-র ৮ জুলাই অসম সাহসিকতার সঙ্গে বুরহান-সহ তিন কুখ্যাত জঙ্গিকে খতম করেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের মেজর সন্দীপ কুমার, ক্যাপ্টেন মানিক শর্মা এবং ল্যান্সনায়েক অরবিন্দ সিং চৌহান। এই বুরহানের মৃত্যুর জেরেই কাশ্মীরে ফের বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে ওঠে। টানা পাঁচ মাস অশান্ত থাকে ভূস্বর্গ।
কীভাবে খতম করা হয়েছিল বুরহানকে? তিন জওয়ানের সেই অপারেশনের কাহিনি হার মানাবে যে কোনও রূদ্ধশ্বাস ছবির গল্পকেও। ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার কাহিনিও এর কাছে জলভাত।
গত বছরের ৮ জুলাই। গোপন সূত্রে খবর এল, কুখ্যাত জঙ্গি সরতাজ আজিজ-সহ তিনজন বামডোরা গ্রামের একটি বাড়িতে ঘাপটি মেরে আছে। সেই বাড়ি থেকেই তারা বিচ্ছিন্নতাবাদের উসকানি দিচ্ছে এবং অস্ত্রশস্ত্র মজুত করেছে। খবর পাওয়া মাত্রই রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের মেজর সন্দীপ কুমারের নেতৃত্বে একটি সেনা দল সেখানে হানা দেয়। অনন্তনাগ থেকে প্রায় ১৮ কিমি দূরে অবস্থিত ওই গ্রামে অপারেশন চালানোর আগেই অভিযানের খবর ফাঁস হয়ে যায়। জঙ্গিরা যাতে পালিয়ে না যায় তাই আর দেরি না করে তড়িঘড়ি সন্দীপ কুমার, ক্যাপ্টেন মানিক শর্মা এবং নায়েক অরবিন্দ সিং চৌহান ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে বিক্ষোভাকারীরা ওই গ্রামে সেনা জওয়ানদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের স্লোগান দিতে থাকে।
ক্যাপ্টেন শর্মা-সহ আরও দুই জওয়ান বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন, তাঁদের কভার ফায়ার দেওয়ার জন্য পিছনে ছিলেন মেজর কুমার। কিন্তু গ্রামবাসীদের ইটবৃষ্টি বেড়ে গেলে পিছু হঠতে বাধ্য হন তাঁরা। জেলা সদরের পুলিশবাহিনীর সঙ্গে অপারেশনের আগে যোগাযোগ করেছিলেন জওয়ানরা। এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, ওই বাড়ি ঘিরে ফেলার কথাও ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু গ্রামবাসীদের ভিড় বেড়েই যাচ্ছিল, সেইসঙ্গে পাথর ছোড়াও। এরপর ফের একবার বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন মেজর কুমার ও তাঁর দল। তখনই জঙ্গিরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। দু’পক্ষের গুলিবৃষ্টির মধ্যে আজিজ পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু জওয়ানদের গুলিতে খতম হয় সে। দ্রুত সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। মেজর কুমারের মাথায় তখন ঘুরছে আরও দুই জঙ্গি ভিতরে রয়েছে।
এরমধ্যেই বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য স্থানীয় এক ইমামকে পাঠান মেজর কুমার। এদিকে দিনের আলো দ্রুত পড়ে আসছিল। যা করার জলদি করতে হবে। গ্রামবাসীদের কোনওভাবেই শান্ত করা যাচ্ছে না। আর থাকতে না পেরে মেজর ঠিক করলেন, জঙ্গিদের গুলিবৃষ্টি উপেক্ষা করেই বাড়ির ভিতরে ঢুকতে হবে। নাহলে ওই দুই জঙ্গি পালিয়ে যেতে পারে। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই জওয়ানরা দেখেন, জঙ্গি পারভেজ আহমেদ লস্করি গুলি চালাতে চালাতে একজনকে পিঠ দিয়ে বাঁচিয়ে বাড়ির পিছনে আপেল বাগানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পাল্টা গুলিতে লস্করিকে নিকেশ করেন জওয়ানরা। তখন বাকি একজন জঙ্গি একা পড়ে যায়। সে গুলি চালানোর চেষ্টা করলে তাকেও খতম করে দেন জওয়ানরা।
পরে জওয়ানরা আবিষ্কার করেন মৃত জঙ্গি আর কেউ নয়, হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি। উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদকে উসকে দেওয়ার মূল হোতা বুরহানের মাথার দাম ছিল ১০ লক্ষ টাকা। ঘটনার একদিন পর অশান্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর। মাসের পর মাস ধরে চলে বিক্ষোভ, আন্দোলন। বহু মানুষের প্রাণ যায় সেই বিক্ষোভে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.